• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুখ দিয়ে ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দিলেন প্রতিবন্ধী ইব্রাহিম

  কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

০৪ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:৫০
প্রতিবন্ধী ইব্রাহিম
মুখ দিয়ে ছবি আঁকেন প্রতিবন্ধী ইব্রাহিম ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

হাত নেই, পা-ও নেই। তাই এক মনে মুখ দিয়েই বিভিন্ন রকমের ছবি এঁকে যাচ্ছেন তিনি। হাত-পা না থাকায় ছবি আঁকার কাজে ব্যবহার করছেন মাথা ও মুখ। মুখে তুলি নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বার বার রং নিচ্ছেন আর ছবি আঁকছেন। হুইল চেয়ারের সঙ্গে বিশেষ উপায়ে লাগানো ক্যানভাসে গরু, গাছ, মানুষসহ বিভিন্ন ছবি আঁকছেন তিনি। এভাবেই ছবি আঁকছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রতিবন্ধী এমদাদুল হক মল্লিক ইব্রাহিম।

ইব্রাহিম জানান, এক সময় দুটি পা সচল ছিল। পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। কাজ করতেন দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে। ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় বিদ্যুতের খুঁটি থেকে পড়ে হারিয়েছেন দুই হাত ও দুই পা। চিকিৎসার খরচ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বহন করলেও নেয়নি তার ভবিষ্যৎ জীবনের দায়িত্ব। তাই নিজ চেষ্টায় ছবি আঁকা শিখে নিজের কর্মকে সবার কাছে তুলে ধরছেন।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দীর্ঘ ৮ বছর। তবে বর্তমানে কোনো রকমে সংসার চলে সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মায়ের বিধবা ভাতা দিয়েই।

মুখ দিয়ে ছবি আঁকা প্রসঙ্গে ইব্রাহিম বলেন, ‘সিআরপিতে থাকা অবস্থায় সবার কাছে শুনেছি লাভলী নামে একজন মুখ দিয়ে ছবি আঁকতেন। লাভলীর সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি। লাভলীর গল্প শুনেই অনুপ্রেরণা পাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে ছবি আঁকতে বসলে মাথা ঘুরত। বমি করতাম। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি আঁকতে পারতাম। বেশি ভালো লাগে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে। তবে বর্তমানে বেশিক্ষণ ছবি আঁকতে পারি না। একটানা ছবি আঁকতে গেলে গায়ে জ্বর চলে আসে। শরীরের সার্বিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়।’

মুখ দিয়ে ছবি আঁকেন প্রতিবন্ধী ইব্রাহিম ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের চককেশব বালুবাজার নিজ গ্রামে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বসবাস করছেন এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। বৃদ্ধা মায়ের অসুস্থতার কারণে গত চার বছর ধরে তিনি তার নিজ বাড়ি চককেশব বালুবাজারে বসবাস করছেন।

ইব্রাহিম জানান, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় তার আঁকা ছবি দিয়ে অনেকগুলো প্রদর্শনী হয়েছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচয় ছিল। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল নিয়মিত। তাদের মাধ্যমে ছবিগুলো আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়েছে। তবে ছবির দাম নিয়ে তেমন একটা দাম চাওয়া হয় না। বেশির ভাগ সময়ে তারা খুশি হয়ে যা দেন তাই নিই।

তিনি আরও জানান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২০টি ছবি নিয়ে এক লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বর্তমানে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতা দিয়ে কোনো রকমে চলছে সংসার।

মান্দা পরানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস খান জানান, মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড এবং তার মায়ের জন্য বিধবা ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা না থাকায় ইব্রাহিমের প্রতিভাকে বিকশিত করতে পারছি না।

মান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, দুই হাত নেই তবুও তিনি মুখের সাহায্যে এঁকে চলেছেন বিভিন্ন রকমের ছবি। মুখ দিয়ে ছবি আঁকা যে একটি বিশেষ গুণ তা ইব্রাহিমের ছবিগুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে ইব্রাহিমের ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা এবং সরকার কর্তৃক সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড