• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বছরে ৯ মাসই জলে ভাসে যে বিদ্যালয়

  সহিদুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ

০৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৭:০৬
এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বিশাল হাওরের মাঝখানে একটি তিনতলা মডেল বিদ্যালয়। তিন থেকে চার কিলোমিটার পর্যন্ত আশপাশে নেই কোনো ঘরবাড়ি বা গ্রাম। বিদ্যালয়টির চারিদিকে থৈ-থৈ পানি আর পানি। দুর থেকে দেখলে মনে হয় সমুদ্রের মধ্যে ভেসে আসছে একটি দুইতলা জাহাজ। কাছে না গিয়ে কেউ বুঝতে পারবে না এটি একটি বিদ্যালয়। এর চারিদিকে নেই কোন রাস্তা-ঘাট। এর মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি তিনতলা ভবন। যাতে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো নৌকা। দেখতে অনেকটা আশ্রয় শিবির মনে হয় এ বিদ্যালয়টি।

আর এখানেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা যোগে প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা আসছে বিদ্যালয়ে। এখানে নিয়মিতই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাজিরাও অন্য যে কোনো বিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি। এটি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নের বাহেরবালী এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। বছরের ৯ মাস এ বিদ্যালয়ের চারপাশে জমে থাকে পানি। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই একটি নৌকার ব্যবস্থা রেখেছে। যাতে করে সকালে স্কুল শুরুর পূর্বে ও স্কুল ছুটির পর তিনশ শিক্ষার্থীদের চার থেক পাঁচ বারে পারাপার করেন একজন মাঝি। এভাবেই এই হাওর বেষ্টিত এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে বিদ্যালয়টি। ভবনটি দেখতেও দৃষ্টিনন্দন।

সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এসইএসডিপি) আওতায় অনগ্রসর হাওরবাসীর জন্য ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাহেরবালী এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় নামের এই স্কুলটি। নানা সংকট আর সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্কুলটি দিব্যি পাঠদান করে যাচ্ছে প্রায় ৩শ শিক্ষার্থীকে। তাদের পাঠদানের জন্য রয়েছেন সাতজন শিক্ষক, এর মধ্যে দুইজন নারী শিক্ষকও রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন একজন অফিস সহকারী, দুইজন দফতরি।

বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রভারানী দাস জানান, ২০১৩ সালে এলাকার হাজী ছায়েদুর রহমান ও উদ্যোক্তা আবু তাহের মিয়ার প্রচেষ্টায় দুইজন শিক্ষক ও ৩৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। তারপর আর থেমে থাকেনি বিদ্যালয়টির পাঠদান। ২০১৭ সালের ২৪ মে এমপিওতে যাওয়ার আগে সেসিপ বেতন সহায়তা প্রদান করতো। বিদ্যালয়টি ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের স্বীকৃতি প্রাপ্ত হলেও এমপিওভুক্ত হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। হাওর বেষ্টিত বাহেরবালি, পুড়াকান্দা, আয়নারগোপ, শিবপুর ও বোয়ালী গ্রামের তিন শতাধিক ছেলেমেয়ে এখানে পড়াশোনা করছে।

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাহমিনা ঐশীসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, এ রকম একটি দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে পেরে তারা আনন্দিত। শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে আন্তরিক এবং যত্ন সহকারে পড়ান ও প্রতিদিনের পড়া বুঝে নেন। তবে একটি মাত্র ছোট নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষকসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করতে হয়। বৈরী আবহাওয়া থাকলে নৌকাডুবির আশঙ্কা থাকে বেশি। তখন খুবই ভয় লাগে।

বাজিতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান সিরাজ জানান, বাহেরবালি উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত হলেও এখানকার শিক্ষার মান খুবই ভালো। বিদ্যালয়টি দিন দিন সুনাম অর্জন করছে। প্রত্যন্ত হাওরের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের এমন ফল তিনি যথেষ্ট ইতিবাচক মনে করেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, দেশে এমন একটি ভাসমান বিদ্যালয় আছে তা জানা ছিল না। বিদ্যালয়টি দেখে আমি বিস্মিত। সম্প্রতি বিখ্যাত ইত্যাদির পরিচালক হানিফ সংকেতের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয়টিকে দশ লাখ টাকার একটি চেক অনুদান দিয়েছে। আমিও আমার ফান্ড থেকে দুই লাখ টাকা দিয়েছি উন্নয়নের জন্য। আমাদের সকলকে এ বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান রক্ষার্থে এগিয়ে আসা উচিত। বিদ্যালয়টির উন্নয়নে ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান ডিসি।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড