মেহেদীর রং শুকানোর আগেই স্বামীর ঘরে লাশ হলো নববধূ

চার মাস পূর্বে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয় তানজিনার। মা হারা তানজিনা খুঁজে পেয়েছিল নতুন এক পরিবার, পেয়েছিল নতুন মা-বাবা, ভেবে ছিল নতুন সংসারে গুছিয়ে নেবে সবকিছু। কিন্তু সবার কপালে কী সুখ থাকে? হাতের মেহেদীর রং মোছার আগেই লাশ হলো মোসাম্মৎ তানজিনা আক্তার (১৯)।

কীটনাশক পানে মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তবে তানজিনার বাবার দাবি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে মেয়েকে।

ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের রামপাল গ্রামে।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

নিহতের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলার মোকাম ইউনিয়নের মিথলমা গ্রামের মো. সেলিম মিয়ার মেয়ে তানজিনা আক্তারকে পার্শ্ববর্তী ময়নামতি ইউনিয়নের রামপালের ফরিজপুর এলাকায় শাহ আলমের ছেলে মো. শরীফের সঙ্গে বিয়ে দেয়। বিয়ের পূর্বে শরীফ দোকানদারি করলেও বিয়ের এক মাস পর জানায় সে বিদেশ যাবে। বিদেশ যাওয়ার টাকার জন্য তানজিনাকে চাপ দেয়। তানজিনা বাবার কাছে টাকাও চায়, কিন্তু তানজিনার বাবা গরিব বিধায় বিদেশের সম্পূর্ণ টাকা দিতে পারেনি। এ নিয়ে তানজিনার স্বামী তার ওপর নির্যাতন চালায়।

গত ২২ অক্টোবর তানজিনার স্বামী টাকার জন্য তানজিনাকে বাবার বাড়িতে পাঠায়। ৪ দিন বাবার বাড়িতে থেকে শনিবার সকালে তানজিনা টাকা ছাড়া স্বামীর বাড়িতে আসে। স্বামীর বাড়িতে আসলে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন তাকে গালাগালি ও মারধর করে।

স্বামীর পরিবারের লোকজন জানান, তানজিনা বাবার বাড়ি থেকে এসে রুমে গিয়ে কীটনাশক পান করে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পেরে তানজিনাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে প্রেরণ করে। পরিবারের সদস্যরা তানজিনাকে ঢাকা না নিয়ে দাউদকান্দি উপজেলার রায়পর বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি হোমিওপ্যাথিক ক্লিনিকে নিয়ে যায়।

ক্লিনিকের ডাক্তার মো. রেজাউল করিম জানান, তানজিনাকে বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বিকালে তানজিনাকে নিয়ে বাড়িতে আসে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে সাড়ে ৭টায় তার মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির এস আই আবুল খায়ের ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় তানজিনার বাবা সেলিম মিয়া বলেন, আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।

ওডি/এএসএল