আরিফুল ইসলাম আরিফ
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার খুব বেশি সময় বাকি নেই। আর মাত্র ১৭ দিন পর অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। তাই এই সময়টুকু যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস অনেক বড়। আপনি যদি প্রতিটি টপিক বিস্তারিত পড়তে চান এখন, তাহলে আপনাকে এত তথ্য মনে রাখতে হবে যে তা পরীক্ষার হলে গিয়ে মনে করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে পারেন।
১. প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে আপনার ২০০ নম্বরই পাওয়ার প্রয়োজন নেই! সাধারণত ১২০-১৩০ মার্কই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট (কম বা একটু বেশি হতে পারে)। তাই প্রথমেই ঠিক করে নিন কোন কোন বিষয়ে কতটুকু জোর দিয়ে আপনি এই মার্কটা তুলবেন।
২. আপনি যে বিষয়গুলোতে আগের থেকেই ভালো জানেন এবং ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন সেগুলোর ওপর বেশি জোর দিন। সেগুলোই বেশি করে পড়তে থাকুন। এই সময়ে নতুন কোনো টপিক না পড়াটাই ভালো।
৩. বেশি গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালো করে পড়ুন। সেগুলো পড়া শেষ হলে কম গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোতে মনোযোগ দিন।
৪. আপনি যদি ম্যাথ, গ্রামার এগুলোতে ভালো ধারণা রাখেন তাহলে সেগুলো খুব গুরুত্ব সহকারে ঝালিয়ে নিন। সাধারণ জ্ঞান যত বেশিই পড়েন না কেন খুব বেশি মনে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। আপনি আপনার দক্ষতার বিষয়গুলোতে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করুন। যেমন-কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি অংশে ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। অবশ্যই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোমতো দেখে নেবেন। কিছু কমন প্রশ্ন আসে যা প্রতি বছরই এদিক-সেদিক করে পরীক্ষাতে দেওয়া হয়। এই প্রশ্নগুলোর একটিও ভুল হলে চলবে না।
৫. কিছু বিষয়ে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে বেশি মার্ক তোলা যায়। যেমন ইংরেজি সাহিত্যের কথাই বলা যায়। জিওফ্রে চসার, শেকক্সপিয়ার, মার্লো, জন মিল্টন, আলেকডান্ডার পোপ, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোলরিজ, বায়রন, শেলি, কিটস, টেনিসন, বার্নাড শ, জেন অস্টিন, ম্যাথু আর্নোল্ড, রবার্ট ব্রাউনিং, জন ডানসহ আরও কয়েকজন লেখকের অল্পকিছু সাহিত্যকর্ম ও কোটেশন শিখে আপনি সহজেই ১০+ মার্ক পেতে পারেন। যা অন্য বিষয়ের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বেশ কঠিন। তাই এই ধরনের বিষয়গুলো মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে পারেন। গ্রামার অংশের দিকেও একটু নজর দিন!
৬. ম্যাথের সূত্রগুলো ভালো করে অনুশীলন করবেন। সূত্র মনে রাখতে না পারলে পরীক্ষার হলে বিভ্রান্তি শুরু হবে। পরিমিতি ও জ্যামিতিতে একটু বেশি সময় দিন। মানসিক দক্ষতার ওপর বিশেষ নজর দিতে পারেন। কারণ অল্পকিছু লজিক্যাল বিষয় মাথায় রাখলেই এই বিষয়ে বেশ ভালো মার্ক তোলা যায়। তাই আমার মতে এই ১৫ নম্বরের ওপর জোড় দেওয়ার উচিত।
৭. আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যেমন—প্রণালি, বিরোধপূর্ণ দ্বীপ, অঞ্চল, রাজধানী, চুক্তি, সম্মেলন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বর্তমান সময়ের বিরোধপূর্ণ ইস্যু। এগুলো সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। বাংলাদেশ বিষয়াবলির ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ, বিভিন্ন অর্জন, অর্থনৈতিক সমীক্ষা, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পর্কে শেষবারের মতো প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও যে টপিকগুলো একটু জটিল, সেগুলো ভালোভাবে দেখতে হবে।
৮. সাহিত্য অংশে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয়- গ্রন্থের নাম ও সেসব গ্রন্থের চরিত্র, মধ্যযুগের সাহিত্য, বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকের উক্তি ও উদ্ধৃতি, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য, বিভিন্ন বাংলা পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের নাম, বিভিন্ন রচনার ধরন (কোনটি কবিতা, কোনটি উপন্যাস ইত্যাদি), রবীন্দ্র-পূর্ববর্তী সাহিত্য, বাংলাদেশের সাহিত্য, নাটকের উৎপত্তি ও বিকাশ, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সাহিত্য ইত্যাদি থেকে। এই অংশগুলো থেকে প্রচুর প্রশ্ন থাকলেও আমাদের আরও কিছু বিষয় থেকে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন আসে।
যেমন- বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ, আধুনিক যুগ, বাংলা গদ্যের বিকাশ, প্রবন্ধের উৎপত্তি, ছন্দ প্রকরণ, বাংলা গান, বাংলা অভিধান ইত্যাদি। এগুলো অবশ্যই একবার করে দেখে নেবেন। বাংলা ব্যাকরণ অংশে সব থেকে বেশি প্রশ্ন হয়েছে- ১. বাগধারা এবং প্রবাদ ২. শুদ্ধ-অশুদ্ধ ৩. বাংলা ভাষার শব্দ ৪. সমাস ৫. সন্ধি ৬. পদ ৭. সমার্থক শব্দ ৮. বাংলা বানান ৯. উপসর্গ ১০. বর্ণমালা ও ধ্বনি- এগুলো থেকে। উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও শব্দ প্রকরণ, পারিভাষিক শব্দ, কারক, প্রত্যয় ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। এগুলো ভালো করে ঝালিয়ে নিন।
৯. মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, সুশাসন, নৈতিকতা, বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক পন্থা, বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ (ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়) এই সংজ্ঞাগুলো থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন সম্পর্কিত বিভিন্ন টার্ম, কিছু পরিভাষা থেকেও প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই এগুলো অবশ্যই দেখে নিতে হবে।
১০. যে বিষয় যা শিখেছেন তার একটি ম্যাপ তৈরি করে ফেলুন। পরীক্ষার আগের কয়েকদিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই কমপক্ষে দুইবার যেন নজর দিতে পারেন সেটা নিশ্চিত করুন।
১১. প্রতিদিন ম্যাথ ও মানসিক দক্ষতা চর্চা করবেন। পরীক্ষার আগে প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে মডেল টেস্ট দিন।
১২. পরীক্ষা নিয়ে কোনো প্রকার চাপ নেবেন না। ভেবে নিন, এই পরীক্ষায় কৃতকার্য না হলেও আপনার ওপর কোনো বাড়তি চাপ পড়বে না। চাপ নিলে আপনি আপনার বেস্ট পারফর্মেন্স দেখাতে পারবেন না।
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড