• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণ দিবস আজ

  অধিকার ডেস্ক    ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ১৩:৫৩

ছবি
ছবি : বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়

বিশ দশকের শেষ এবং ত্রিশ দশকের প্রাক্কালে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ করেন বিয়োগান্তক ও পারিবারিক কাহিনী নির্ভর বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’। তিনি এই উপন্যাসটি যতটা সুন্দর ও সাবলীল ভাবে গড়ে তুলেছে ঠিক তেমনি ভাবে চলচ্চিত্রে রূপ দিয়ে ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। যার ডাক নাম ছিলো মাণিক। আজ এই মানুষটির প্রয়াণ দিবস।

তিনি ২মে ১৯২১সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। যিনি ছিলেন লেখক, চিত্রকর, ভারতীয় মুদ্রণশিল্পের পথিকৃত। পিতা ছিলেন প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় এবং মা সুপ্রভা দেবী। সত্যজিৎ রায়ের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার মসুয়া গ্রামে। তিনি মাত্র তিন বছর বয়সে পিতৃহারা হন। এই সময়ে সুপ্রভা দেবীকে প্রচণ্ড আর্থিক কষ্টের ভিতর দিয়ে সন্তান লালন পালন করতে থাকেন। প্রথমেই তাঁদের ছাপাখানা হাতছাড়া হয়ে যায়। আর্থিক অনটনের জন্য সুপ্রভাদেবী চলে আসেন তাঁর ভাইয়ের বাড়ি কলকাতায়।

সত্যজিৎ রায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তাঁর মায়ের কাছে থেকে। তিনি আট বছর বয়সে ভর্তি হন বালিগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে। ১৯৩৬সালে বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ প্রেসিডেন্সি কলেজে। এই কলেজে প্রথম দুই বৎসর বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করলেও শেষ বৎসরে এসে বিষয় পাল্টে অর্থনীতিতে পড়েন পড়েন তিনি। ফলে তাঁর লেখাপড়ার সময় দীর্ঘতর হয়ে উঠে। এই সময়ে ইনি পাশ্চাত্য চিরায়ত চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত নিয়ে এতটাই আগ্রহী হয়ে উঠেন যে, তাঁর মূল পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটে। শেষ পর্যন্ত ১৯৪০ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিএ (সম্মান) পাশ করেন তিনি।

সত্যজিৎ বরাবরই ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি দুর্বল ছিলেন। তার পড়ার তালিকায় ছিলো ইংরেজিতে লিখা উপন্যাস ও অন্যান্য গ্রন্থাদি। তবে ১৯৪৪ সালে প্রথম ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস পড়েন। তখন তিনি ডি.কে, দাসগুপ্ত ‘সিগনেট প্রেস’ এ কাজ করেন। এই উপন্যাসটি পড়ার সময় সত্যজিৎকে বলেন এই উপন্যাস থেকে খুব ভালো একটি চলচ্চিত্র হতে পারে। এই সময় থেকে খুব আগ্রহ নিয়ে চলচ্চিত্র দেখা শুরু করেন সত্যজিৎ । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সাথে যোগাযোগ করে- নতুন মার্কিন চলচ্চিত্রগুলোর বিষয়ে খবর নিতেন। বিশেষ করে নরম্যান ক্লেয়ার নামের রয়েল এয়ার ফোর্সের এক কর্মচারী এ বিষয়ে তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে কলকাতার প্রেক্ষাগৃহগুলোতে হলিউডে নির্মিত প্রচুর ছবি দেখানো হতো। এই সূত্রে হলিউডের চলচ্চিত্রগুলো কলকাতার চলচ্চিত্র প্রেমিকদের কাছে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। ১৯৪৭ সালে সত্যজিৎ এবং বংশীচন্দ্র দাসগুপ্ত কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সোসাইটিতে চলচ্চিত্র দেখানো হতো এবং এই বিষয়ে পরে ঘরোয়াভাবে আলোচনার ব্যবস্থা করা হতো।

এই সময় থেকে সত্যজিৎ সাধারণ মানুষের কাছে ততটা পরিচিত না হয়ে উঠেন তারচেও বেশি কলকাতার চলচ্চিত্র অঙ্গনে বেশ সুপরিচিত পেতে থাকেন। এই কারণেই ১৯৪৯ সালে যখন ফরাসি চলচ্চিত্রকার জঁ রেনোর (Jean Renoir) তাঁর The River ছবি নির্মাণের জন্য কলকাতায় আসেন, তখন সত্যজিৎকে তাঁর ছবির চিত্রগ্রহণের উপযোগী স্থান খোঁজার ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসাবে খুঁজে নিয়েছিলেন। এটাই ছিল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকারের সাথে তাঁর প্রথম পরিচয়। এই সময়ই তিনি রেনোর’র কাছে ‘পথের পাঁচালী’-র চলচ্চিত্রায়ণ নিয়ে আলাপ করেন। রেনোর এই বিষয়ে বিশেষভাবে তাঁকে উৎসাহিত করেন। এবং অনেকে মনে করেন, বাস্তবধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণের মৌলিক উপাদনগুলো সম্পর্কে রেনরো-র কাছ থেকে তিনি বিশেষ ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৯৫২ সালের ২৭ অক্টোবর ‘পথের পাঁচাল’র দৃশ্যগ্রহণের মাধ্যমে সত্যজিৎ রায় শুরু করেন চলচ্চিত্র পরিচালনা। চলচ্চিত্রটি শেষ করতে তাঁর সময় লেগেছিলো দীর্ঘ তিন বছর। ছবিটি ১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট তারিখে মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার পর পরই ছবিটি দর্শক-সমালোচক সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করে এবং বহুদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এবং ভারতের বাইরে প্রদর্শিত হয়। এই ছবির সাফল্যের পর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। এর পরে একেএকে নির্মাণ করেন- অপারিজত, পরশপাথর, জলসাঘর’ অপুর সংসার, দেবী, তিনকন্যা, কাঞ্জনজঙ্ঘা, অভিযান, মহানগর, চারুলতা’সহ প্রভৃতি।

হয়েছেন আন্তর্জাতিকভাবে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে সুপরিচিত। পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। সত্যজিৎ রায় তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’তে পেয়েছেন ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব দলিল’ (Best Human Document) পুরস্কারটি। ‘পথের পাঁচালি, অপরাজিত ও অপুর সংসার’ এই তিনটি চলচ্চিত্রকে একত্রে ‘অপু-ত্রয়ী’ বলা হয়, এর জন্য তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বা ম্যাগনাম ওপাস হিসেবে বহুল স্বীকৃত।

বাংলা চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি ১৯৯২ সালের আজকের দিনে হৃদরোগ আক্রান্ত মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর কিছু সপ্তাহ আগে অত্যন্ত অসুস্থ ও শয্যাশায়ী অবস্থায় তিনি তাঁর জীবনের শেষ পুরস্কার সম্মানসূচক অস্কার গ্রহণ করেন ১৯৯২ সালে।

ওডি/এসএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড