• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভক্তদের হৃদয়ে আজও অমলিন রোজী আফসারী

  নাবিলা বুশরা

২৩ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৭
রোজী আফসারী
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নাম রোজী আফসারী

“দিনটি ছিলো ১৯৮৫ সালের ১৮ জুন। প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালে রোজী কল দেয় আমাকে। কল রিসিভ করতেই জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার সাদা পাঞ্জাবি আছে?’ বললাম, ‘আছে। কিন্তু কেন?’ ‘দ্রুত মগবাজার এসে আমাকে কল দাও। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি’।”

এ বিষয়ে বারবার জিজ্ঞেস করার পরও রোজী কিছু বলেননি। তখন মোবাইল ফোনের প্রচলন শুরু হয়নি। তাই শহরের বিভিন্ন স্থানে রাখা টেলিফোন বুথ থেকে ‘পয়সা’ ব্যবহার করে রোজীর বাসার ল্যান্ডফোনে কল দিতাম আমি। রোজীর ডাকে মহাখালীর বাসা থেকে দ্রুত মগবাজার পৌঁছালাম। সেখানে একটি হাসপাতালের টেলিফোন বুথে গিয়ে রোজীকে কল দেই আমি। তখন সে আমাকে বললো, ‘মগবাজার কাজী অফিসে চলে আসো’। ঠিক তখনই আমি বুঝতে পারি আমাদের আজ বিয়ে। অথচ এক ঘণ্টা আগেও জানতাম না রোজীকে বিয়ে করছি।” কথাগুলো রোজী আফসারীর স্বামী মালেক আফসারীর।

রোজী ও আফসারীর সম্পর্কের শুরু ১৯৮০ সালে ‘বিনি সুতার মালা’ ছবির সেটে। এই ছবির নায়িকা ছিলেন রোজী। আর সহকারী পরিচালক ছিলেন মালেক আফসারী। ঢাকার পাশে দোহারের কলাকোপায় ছবিটির দ্বিতীয় লটের শ্যুটিং চলছিলো।

হৃদয়গ্রাহী সেই বিকেলের দৃশ্যটির কথা আজও ভাবেন আফসারী। ‘শ্যুটিং শেষ করে একা একা রোজী পুকুর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখছিল। আমি অনুমতি নিয়ে তার পাশে বসলাম। তখন প্রচণ্ড শীত ছিলো, আমি কাঁপছিলাম। সেটি দেখে রোজী তার গায়ের শাল খুলে আমাকে পরিয়ে দিলো। তখন আমার প্রতি তার অন্যরকম একটি টান অনুভব করলাম। কথা বলতে বলতে দু’জন দু’জনের মনের অনেকখানি কাছে চলে গেলাম।’

'এরপর আমাদের সম্পর্কের গভীরতা বাড়তে থাকে। চলতে থাকে দেখা করা, কথা বলা। এভাবে কেটে যায় প্রায় ৫ বছর। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিলো এতো দীর্ঘ সময়েও কেউ কাউকে কখনো একবারে জন্যও ‘তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটা বলিনি’।

রোজীর চেয়ে আফসারী বয়সে প্রায় ২০ বছরের ছোট ছিলেন। ৫ বছরের প্রেম শেষে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন দুইজন। তাদের দুইজনের সংসার জীবনের ২৭ বছরের সম্পর্কে কখনও তিল পরিমাণ ফাটল ধরেনি কখনো।

রোজী আফসারী

মালেক আফসারীর সঙ্গে রোজী আফসারী (ছবি: সংগৃহীত)

কিংবদন্তিতুল্য এই নায়িকা অভিনয় করেছেন অসংখ্য সিনেমায়। রোজী আফসারীর জন্ম বৃহত্তর নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুরে ১৯৪৫ সালের ২৩ এপ্রিল। তাঁর পিতা ওয়ালিউল্লাহ এক সময় কবি ছিলেন।

রোজী আফসারীর প্রকৃত নাম শামীমা আক্তার রোজী। ছয় ভাইবোনের মধ্যে রোজী ছিলেন সবার বড়। তাঁর লেখাপড়া করা শুরু হয়েছিল উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে। জুনিয়র ক্যামব্রিজ করেছিলেন ঢাকার ভিকারুননিসা স্কুল হতে।

প্রথমবার তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চিত্রগ্রাহক আবদুস সামাদের সঙ্গে। সে সংসার বেশিদিন টিকেনি। পরবর্তীতে মালেক আফসারীর সাথে বিবাহে আবদ্ধ হন তিনি। তাঁর সন্তানদের নাম: কবিতা সামাদ ও মোহাব্বত জুবায়ের।

১৯৬৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪ দশক ধরে তিনি প্রায় ৩৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন রোজী। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে তিনি প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পেলেন ‘এইতো জীবন’ চলচ্চিত্রে। এই চলচ্চিত্রে রোজীর নায়ক ছিলেন শওকত আকবর। সুমিতা দেবীও এতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। তাঁর নায়ক ছিলেন রহমান। প্রথম অভিনয়ে রোজী পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন আট হাজার টাকা।

রোজী আফসারী

রোজী আফসারী (ছবি: সংগৃহীত)

অভিনয় জীবনকে ব্যাপকভাবে সমাদৃত করেছিলেন রোজী আফসারী। তাকে বলা হয় 'বাংলার মুখ'। কখনো দাপুটে নায়িকা, কখনো আদরিনী মা, বড় ভাবী, সংসারের বড় বৌ, এক বিধবা, মহিয়সী নারী চরিত্র, বাদশাহ মহলের নির্বাসিত বেগম কিংবা পরম শ্রদ্ধেয় বড় বোনের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন একাগ্রতার সাথে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় একালের রূপকথা, বড় বউ, জোয়ার ভাটা, নীল আকাশের নিচে, অশ্রু দিয়ে লিখা, গাঁয়ের বধূ, রুপালি সৈকতে চলচ্চিত্রে। সংগ্রামী নারীর চরিত্রে রোজীর চোখ, মুখে যে আগুন দেখা যেত তার সার্থক প্রতিফলন হলো লাঠিয়াল, আমার সংসার, ওমর আকবর, তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্র। ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত 'তিতাস একটি নদীর নাম' চলচ্চিত্রে রোজীর অভিনয় দর্শকের মনে আজও যেভাবে গেঁথে আছে, তেমনটি থাকবে আরও বহু বছর। ‘বন্ধন’ চলচ্চিত্রে রোজী ১৪ বছরের মেয়ের ভূমিকা ছাড়াও ৪০ বছর বয়সী মহিলার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অনন্য উপস্থিতিই প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্রের প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল।

২০০৭ সালের ৯ মার্চ কিডনিজনিত রোগে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া রেখে পরপারে পাড়ি জমান রোজী আফসারী।

রোজী অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো:

- এই তো জীবন (১৯৬৪, নায়ক শওকত আকবর) - সংগম (১৯৬৪,হারুন) - বন্ধন (১৯৬৪) - একালের রূপকথা (১৯৬৫,নায়ক আনোয়ার হোসেন) - রাহী (১৯৬৫, নায়ক আনোয়ার হোসেন) - ইয়ে ভি এক কাহানী (নায়ক হারুন) - আওর গম নেহি(নায়ক শওকত আকবর) - পুনম কি রাত(১৯৬৬, শওকত আকবর) - ইস ধরতি পর(১৯৬৬, নায়ক হারুন) - উলঝন (১৯৬৭, নায়ক খলিল) - বেদের মেয়ে (১৯৬৮, নায়ক আজিম) - অভিশাপ (১৯৬৮, নায়ক শওকত আকবর) - জোয়ার ভাটা (১৯৬৯, নায়ক খান আতা) - জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০, নায়ক শওকত আকবর) - ঈশা খাঁ (১৯৭৪, নায়ক আনোয়ার হোসেন) - নিজেরে হারায়ে খুঁজি (১৯৭৪, নায়ক আনোয়ার হোসেন) - চাওয়া পাওয়া (১৯৬৭) - সোয়ে নদীয়া জাগে পানি, এতটুকু আশা, রাখাল বন্ধু (১৯৬৮) - নীল আকাশের নীচে, কসম উস ওয়াক্ত কি (১৯৬৯) - কাঁচ কাটা হীরে, দ্বীপ নেভে নাই, সাধারণ মেয়ে, বড় বৌ (১৯৭০) - স্মৃতিটুকু থাক, সুখ দুঃখ (১৯৭১) - সমাধান, মানুষের মন, বাহরাম বাদশা, জীবন সঙ্গীত, স্বীকৃতি (১৯৭২) - রংবাজ, তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩) - পরিচয়, আলোর মিছিল (১৯৭৪) - লাঠিয়াল (১৯৭৫) - প্রতিনিধি, সূর্যগ্রহণ, দ্য রেইন (১৯৭৬) - অশিক্ষিত, নাগরদোলা, দাবী, মহেশখালীর বাঁকে, গোলাপি এখনো ট্রেনে (১৯৭৮) - সূর্য সংগ্রাম, বেলা শেষের গান (১৯৭৯) - সওদাগর (১৯৮২) - মেঘ বিজলী বাদল (১৯৮৩) - মায়ের দাবী (১৯৮৬) - ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯) - ক্ষমা (১৯৯২) - এই ঘর এই সংসার (১৯৯৫) - হীরা চুন্নি পান্না (২০০০)

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর জন্য ভক্তদের ভালোবাসা আজও অমলিন। তিনি চিরদিন বেঁচে থাকুন দর্শকের অন্তরে। তাঁর জন্মদিনে 'দৈনিক অধিকার' পরিবারের পক্ষ থেকে রইলো গভীর শ্রদ্ধা।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

ওডি/এএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড