• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সাদা-কালো পর্দার এক রঙিন প্রজাপতি ‘সুচিত্রা’

  নিশীতা মিতু

০৬ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৪৭
সুচিত্রা সেন
সুচিত্রা সেন; (ছবি : সংগৃহীত)

তার হাসি ঢেউ খেলে যায় হৃদয়ে, দৃষ্টি জুড়ে যেন অন্যরকম মাদকতা। তার চুলের প্যাঁচে জড়িয়ে পড়ে যে কারোর মন— বলছিলাম চিত্রনায়িকা সুচিত্রা সেনের কথা। একজন নায়িকা বলতে চোখের সামনে যেমন নারীর ছবি ভেসে ওঠে তারই প্রতিচ্ছবিই যেন তিনি। যার আদি থেকে অন্ত- পুরোটাই জুড়ে ছিল মুগ্ধতা।

জন্মসূত্রে বাংলাদেশের মেয়ে সুচিত্রা। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলার সদর পাবনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। বাবার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অন্তর্গত সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রাম। জন্মগত নাম রমা দাশগুপ্ত হলেও সবার কাছে তিনি সুচিত্রা সেন নামেই অধিক পরিচিত।

সুচিত্রা ভারতীয় চলচিত্র এসেছিলেন মথ হয়ে। এরপর রঙিন প্রজাপতি হয়ে চলচ্চিত্র বাগানে উড়েছেন নিজ ছন্দে, নিজের সৌন্দর্যকে সঙ্গী করে। সুচিত্রা সেনের প্রথম ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন তিনি।

সুচিত্রা নামটি বললেই তার পাশে যে মানুষটির কথা সবার প্রথমে চলে আসে তিনি উত্তম কুমার। চলচ্চিত্র জগতের এ সময়ে এসেও সেরা জুটির নাম বলতে বললে যে কেউ চোখ বন্ধ করে বলবে উত্তম-সুচিত্রা। না বলেই বা উপায় কী! ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ নামের সিনেমাতে উত্তমের বিপরীতে প্রথম অভিনয় করেন সুচিত্রা। এরপরই শুরু হয় বাংলা চলচ্চিত্রের এক রঙিন অধ্যায়।

রূপালি পর্দায় সাদা আর কালো রং থাকলেও অভিনয়ে পুরোপুরি আবেগ ঢেলে দিয়ে রঙিন করে ফেলতেন উত্তম আর সুচিত্রা। তাইতো উত্তম-সুচিত্রা জুটি একের পর এক হিট ছবি উপহার দিতে থাকেন। বাংলা ছবির এই অবিসংবাদিত জুটি পরবর্তী ২০ বছরে ছিলেন আইকনস্বরূপ।

সুচিত্রা দারুণ প্রেমিকা অভিনেত্রী। পর্দার সামনে একজন প্রেমিকা বা প্রেয়সীর রূপ পুরোটাই দেখা যেতো তার মাঝে। উত্তম কুমারের সঙ্গে তার রোমান্টিক সিনেমাগুলো তাই দাগ কেটে গেছে দর্শকের হৃদয়ে। প্রিয় মানুষের প্রতি সুচিত্রা যখন আবদারের সুরে বলেছেন, “কিছুক্ষণ আরও নাহয় রহিতে কাছে// আরও কিছু কথা নাহয় বলিতে মোরে// এই মধুক্ষণ মধুময় হয়ে নাহয় উঠিত ভরে” তা ব্যাকুল করেছে সবাইকে।

ভালোবাসার মানুষকে কী করে নিজের করে রাখতে হয়, তার কাছ থেকে কী করে ভালোবাসা আদায় করতে হয় তার সবটুকু মন্ত্র জানা ছিল সুচিত্রার। ‘হারানো সুর’ সিনেমায় তাইতো আবেগভরা কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন- “তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার// কানে কানে শুধু একবার বল, তুমি যে আমার”।

ভালোবাসা কী করে প্রকাশ করতে হয় তা ভালো জানা ছিল সুচিত্রা আর উত্তমের। আর তাইতো এখনো উদাস প্রেমিক তার প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করে গেয়ে ওঠে- “এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বল তো// যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় তবে কেমন হতো তুমি বল তো”।

১৯৫৫ সালের ‘দেবদাস’ ছবির জন্য সুচিত্রা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে তার অভিনীত সবকটি ছবিই ব্যবসা সফল। ১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস জয় করেন। ১৯৭২ সালে অর্জন করেছেন পদ্মশ্রী সম্মান।

দীর্ঘ ২৫ বছর দাপুটে অভিনয় জীবনের ইতি ঘটান তিনি ১৯৭৮ সালে। এরপর লোকচক্ষু থেকে আত্মগোপন করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এ কিংবদন্তি শিল্পীর মৃত্যু হয়।

সুচিত্রা চলে গেছেন, রেখে গেছেন তার হাসি আর তার কাজ। এখনও প্রেমিকারূপে পর্দার সুচিত্রা শিহরিত করে প্রেমিক মনকে। এখনও তার দৃষ্টি আর হাসির মাদকতায় মুগ্ধ হয় যে কেউ। সুচিত্রা যে সময় অভিনয় করেছিলেন, সেসময় পর্দায় রঙের ঘাটতি থাকলেও, তার অভিনয়ে রং ছিল পরিমিত ও পরিপূর্ণ।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড