অধিকার ডেস্ক ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:০২
বাঙালি জাতিসত্তার সাথে তিন হুমায়ুন ওতপ্রোতভাবে জড়িতো। বলতে পারি আমাদের শৈশব থেকেই আমরা এই তিন হুমায়ুনের জাদু শৈলীর সাথে যুক্ত। একজন যেমন কলমের জাদুতে আচ্ছন্ন করেছেন তার সৃষ্টির মাধ্যমে অন্যজন তেমনি অভিনয়ের দিয়ে। তৃতীয় জন আবার মুক্ত চিন্তার জনক। বলছি হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ুন ফরিদী এবং হুমায়ুন আজাদের কথা।
হুমায়ূন আহমেদ তার ‘রজনী’ গ্রন্থের উৎসর্গপত্রে লিখেছেন, ‘মহিলা সমিতির সামনে দেখলাম ছোটখাটো একটা জটলা, এগিয়ে গিয়ে দেখি যুবক বয়স্ক এক লোক চা খাচ্ছে, আর একদল যুবক তাকে ঘিরে ধরে চা খাওয়া দেখছে, যুবকটি হুমায়ূন ফরিদী। আমার এই বইটি সেই যুবককে উৎসর্গ করলাম।’
আজ সেই কিংবদন্তিকে হারানোর দিন। তিনি হুমায়ুন ফরিদী।
১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ছোটবেলায় ছন্নছাড়া স্বভাবের জন্য ফরিদীকে ‘পাগলা’ ‘সম্রাট’,‘গৌতম’—এমন নানা নামে ডাকা হত। তিনি ১৯৬৫ সালে পিতার চাকরীর সুবাদে মাদারিপুরের ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এ ভর্তি হন। এ সময় মাদারিপুর থেকেই নাট্য জগতে প্রবেশ করেন। তার নাট্যঙ্গনের গুরু বাশার মাহমুদ। তখন নাট্যকার বাশার মাহমুদের শিল্পী নাট্যগোষ্ঠী নামের একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে কল্যাণ মিত্রের ‘ত্রিরত্ন’ নাটকে ‘রত্ন’ রত্ন চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয় জীবনে সর্বপ্রথম দর্শকদের সামনে অভিনয় করেন।
এরপর এই সংগঠনের সদস্য হয় ‘টাকা আনা পাই’ ‘দায়ী কে’ ‘সমাপ্তি’ ‘অবিচার’সহ ৬টি মঞ্চ নাটকে অংশ নেন। ১৯৭১ যুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। নয় মাসের যুদ্ধ পরে লাল-সবুজের পতাকা হাতে ঢাকায় ফিরে আসেন তিনি। এরপরে টানা পাঁচ বছর বোহেমিয়ান জীবন কাটিয়ে শেষে অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স করলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
তিনি সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। তিনি আল-বেরুনী হলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল-দীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল দীনের সংস্পর্শে আসেন। এই ক্যাম্পাসেই ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক লিখে নির্দেশনা দেন এবং অভিনয়ও করেন ফরিদী। তিনি সেলিম আল দীনের ‘সংবাদ কার্টুন’-এ একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করে ফরিদী মঞ্চে উঠে আসেন। মঞ্চে তার সু-অভিনীত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘শকুন্তলা’, ‘ফনিমনসা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘মুন্তাসির ফ্যান্টাসি’, ‘কেরামত মঙ্গল’ প্রভৃতি। ১৯৯০ সালে স্ব-নির্দেশিত ‘ভূত’ দিয়ে শেষ হয় ফরিদীর ঢাকা থিয়েটারের জীবন।
মঞ্চ থেকে টিভি নাটকে অভিনয় করেন। টিভি নাটক থেকে নিতান্তই পেটের তাগিদে এসেছিলেন চলচ্চিত্রের রঙিন পর্দায়। যেখানেই গিয়েছেন তিনি, সেখানেই নিজ অভিনয় প্রতিভার গুণে জয় করেছেন দর্শকহৃদয়। নব্বইয়ের গোড়া থেকেই হুমায়ুন ফরিদীর বড় পর্দার বাণিজ্যিক আর বিকল্প ধারা মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ছিলো তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’। এরপর তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে ‘সন্ত্রাস’, ‘বীরপুরুষ’, ‘দিনমজুর’, ‘লড়াকু’, ‘দহন,’ ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘কন্যাদান’, ‘আঞ্জুমান’, ‘দুর্জয়’, ‘বিচার হবে’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘আনন্দ অশ্রু’সহ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
নাটকে অসামান্য অবদানের জন্য হুমায়ুন ফরিদীকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননা প্রদান করেন। ২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ ছবিতে সেরা অভিনেতা হিসাবে পান ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তিনি। এছাড়া নৃত্যকলা ও অভিনয় শিল্পের জন্য ২০১৮ সালের (মরণোত্তর) একুশে পদক লাভ করেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড