• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আবৃত্তিতে ‘হাজার বছর ধরে’

  শব্দনীল

০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:০৬
আবৃত্তি
ছবি : উচ্চারিত হচ্ছে আবৃত্তি শিল্পীর কণ্ঠে ‘হাজার বছর ধরে’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংগঠন ধ্বনি’র প্রযোজনায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ‘আবৃত্তি উৎসব ২০১৮’। ধ্বনি’র অনুষ্ঠান মানে নতুন কিছু মঞ্চায়ন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। সবথেকে বড় চমক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের অসামান্য সৃষ্টি ‘হাজার বছর ধরে’ কথ্যক মঞ্চায়ন বা আবৃত্তি।

আমার প্রথমে বিশ্বাস হয়নি কারণ ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটি আবৃত্তির মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায় সেটা জানা ছিলো না। তবে যে দিন জানলাম সত্যি এটা মঞ্চস্থ হচ্ছে ক্ষণ গুনতে শুরু করলাম। আবৃত্তি উৎসবে যাওয়ার সময় বারবার মনে হচ্ছিলো যতটা প্রত্যাশা নিয়ে যাচ্ছি, সেই প্রত্যাশা মিটবে তো!

ছবি ছবি : ধ্বনি আবৃত্তি উৎসব ২০১৮

কারণ, ‘হাজার বছর ধরে’ যখন প্রথম পড়ি সেটা ২০০৭ । উপন্যাসটি আমাদের পাঠ্য বিষয় ছিলো। যার জন্য উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রর সাথেই ছিলো আমার পরিচয়। ছিলো প্রতিটা দৃশ্যের সাথে কাল্পনিক ভাবনা। প্রতি লাইনের সাথে নিজস্ব ঢং এর উপস্থাপন। আমার কৈশোর মনের দাগ কাটা কল্পনার সাথে মিলবে তো? মনের ভিতর এমন একটি প্রশ্ন সবসময় উকি দিচ্ছিলো। যদিও তিন বছর ধরে আবৃত্তি সংগঠন ধ্বনি’র অনুষ্ঠান দেখে আসছি তাতে প্রতিবার হতবাকই হওয়া বইকি অবাক হয়নি।

আমি যখন জাহাঙ্গীরনগর পৌঁছলাম তখন অগ্রহায়ণের মিষ্টি শীতলতা আমায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলো আর কদিন পরই পৌষ। বিকের সূর্যটি কুসুমের মত গোল হয়ে ঝুলে আছে পশ্চিমের আকাশে।

ছবিছবি : ধ্বনি আবৃত্তি উৎসব ২০১৮

আমাদের যান্ত্রিক শহর ঢাকার বিকাল এখনো শিশির ভেজা হয়ে ওঠেনি। তবে জাহাঙ্গীরনগরের পরিবেশ সম্পর্কে জানা থাকায় সঙ্গে চাদর এনেছিলাম। না হলে গত বছরের মতো সেলিম আল দিন মুক্ত মঞ্চে বসে ঠকঠক করে কাঁপতে হতো শীতে আর অনুষ্ঠান দেখতে হবো।

যেহেতু একটু আগে পৌঁছে গেছিলাম সেহেতু অপেক্ষা। কখন ৬:৩০ বাজবে। অপেক্ষা হলো খুবই কষ্টকর বিষয়। আমি এতটা উত্তেজনায় ছিলাম যে আমার কাছে ঘড়ির কাটার এক একটা সেকেন্ড এক এক ঘণ্টা লাগছিলো।

অপেক্ষা করতে করতে কাঙ্ক্ষিত সময়। সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চের উপস্থাপক যখন বলছে, ' শুরু হচ্ছে ধ্বনি প্রয়োজনায়, রশীদ সোহান নির্দেশনায় শুরু হচ্ছে ‘হাজার বছর ধরে’। তখন থেকেই একটা ঘোরের ভেতর চলে গেলাম আমি। আর সে গোরটা মঞ্চসাজ থেকে তৈরি।

নীল আসমানে জ্যোৎস্না বিলাসী চাঁদ। ধীরে ধীরে যে ভাবে হাঁটতে থাকে সে ভাবেই সুনিপুণ উপস্থাপনের মাধ্যমে ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের চরিত্রগুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতে শুরু করলো। এই তো সকাল। পুকুর পাড়ে বসে মন্তু দাঁত মাঝতে মাঝতে কথা বলছে টুনির সাথে। যেটা আমার কল্পনায় ছিল। শুনতে পাচ্ছি বকবুল মিয়ার কাশির শব্দ, দেখতে পাচ্ছি তার দুই বউ আমেনা ও ফাতেমাকে দিয়ে রাতের আধারে হালচাষ করা।

ছবি

ছবি : প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী নাসির উদ্দিন

রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে আম্বিয়ার কণ্ঠের গান, ‘স্বপ্নে আইলো রাজার কুমার, স্বপ্নে গেলো চইলারে.....’ সাথে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গার শব্দ। দেখতে পাচ্ছি রাস্তার দু’ধারে খেজুরের গাছ, কাঁচা রাস্তা। নবীনগরে সেই রাস্তা ধরে টুপি মাথায় দিয়ে হাঁটছে মন্তু। টুনিদের বাড়ি। নদীতে নৌকা চালিয়ে মন্তুর গান, ‘আশা ছিলো মনে মনে, প্রেম করিমু তোমার সনে.....’। টুনির আবেগাক্রান্ত চোখের ভাষা।

মনে হচ্ছে টুনি, মন্তু কাছে না। শান্তির হাটে আমার কাছেই আবদার করছে চুড়ি কেনার। মনে হচ্ছে মন্তু না, আমি আর টুনি যাত্রা দেখছি এক সাথে বসে। বকবুলের একমাত্র মেয়ে হিরনের বিয়ের অনুষ্ঠান। গান, হই-হুল্লা, খিলখিল হাসি। লজ্জায় দৌড়ে মন্তুর ঘরের খিল আটকানো আম্বিয়া। টুনির রাগ, ছেলেমানুষি ঝগড়া। টুনি আর মকবুলের কথোপকথন। আম্বিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব। সম্পদের লোভে কবুলের চকচক করে উঠা চোখ। তালাকের পর তার দু’বউয়ের বিদায়।

গ্রামে উলাউঠা কেচ্ছা। বকবুলের মৃত্যু এবং হঠাৎ টুনির ছেলে মানুষিপনা কাটিয়ে বড় হয়ে উঠা। সে যে মন্তুর জন্য শাপলার মালা গাঁধতো তাকেই কতটা শীতল গলায় বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া কথা বলা। পুথির সুর এবং হাজার বছরের পুরানো সে রাত। এতটাই ঘোরের ভেতর ছিলাম। কখন মঞ্চায়ন শেষ হয়ছে বুঝতে পারিনি। যখন অতিথি আবৃত্তি শিল্পীর একক আবৃত্তি শুরু হলো তখন বুঝতে পারলাম শেষ হয়েছে।

ছবিছবি : আবৃত্তি করছেন অতিথি শিল্পী বিপ্লব সাহা

তবু মনে হচ্ছিল আবার শুরু হবে, আবার দেখবো। কারণ, কল্পনার দৃশ্যপট এবং উপস্থাপন এক বিন্দুতে এসে মিলিত হয়ে আমাকে বারবার নিয়ে যাচ্ছিল আবহমান গ্রাম বাংলায়।

আবৃত্তি শিল্পীবৃন্দ পন্নী, মুন, মুমু, তমা, ঋতু, জাহিদ, উদয়, মৌমির উপস্থাপন, উচ্চারণ ছিল নান্দনিক। বলা যায় এটি ছিল একটি কম্পেক্ট আর্ট।

তারপরেই ভরাট গলায় আবৃত্তি করেলেন প্রখ্যাত বাচিক শিল্পী নাসির উদ্দিন, বিপ্লব সাহা। তখন কবিতার ঘ্রাণে স্তব্ধ হয়ে ছিল মুক্তমঞ্চের সম্পূর্ণ পরিবেশ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড