মাহের রাহাত
সিনেমায় নেই প্রথাগত ধারার নাচ গান বা রংচঙা কিছুই। দেখার সময় মনে হতে পারে কিছুকিছু দৃশ্যায়ন আরেকটু সুন্দর হতে পারত বা জুড়ে দেওয়া যেত আরো নানান কিছু। এসবের ঘাটতি থাকলে শেষ অব্দি আপনি সিনেমাটি না দেখে উঠতে চাইবেন না। এর কারণ বলা যায় চিত্রনাট্যের গতিময়তা। গল্প বলার ধরণটাই আকর্ষণীয়। একের পর এক খুন আর শেষ পর্যন্ত কি ঘটতে যাচ্ছে তাই দর্শককে ধরে রাখবে।
বলছিলাম এই বছরেই ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে নির্মিত চলচ্চিত্র 'কালের পুতুল' এর কথা। পরিচালক আকা রেজা গালিব।
সিনেমার একেবারে শুরুতেই দেখা যায় জিপগাড়িতে চড়ে দশজনের একটি দল ঘুরতে গেছে পার্বত্য বান্দরবানে। রশীদ চৌধুরী নাম্নী লোকের আমন্ত্রণে তাদের এই যাত্রা। এই ভিন্ন পেশার মানুষজন দের অভ্যর্থনা জানাতে দেখা যায় এক পাহাড়ি আদিবাসীকে ।বলে রাখা ভাল এই পর্যটকেরা কেউ কাউকে চেনেন না। দুর্গম উঁচুনিচু পথ আর বিপদজনক খাদের উপর ঝুলন্ত ব্রীজ পেরিয়ে এক বাংলোয় ঠাই হয় পর্যটকদের।
কাহিনী আদতে সেখানেই শুরু।
বাংলোর টিভিতে হঠাৎ চালু হয়ে যায় একমাত্র টিভিসেটটি। রশীদ সাহেবের পরিবর্তে এই ভিডিও টিই তাদের অভ্যর্থনা জানায়।
সেখানে মিনিট পনেরো ধরে চলা ভিডিওটেপ এ অচেনা এক লোকের কথায় বেরিয়ে আসে আমন্ত্রিত প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতজীবনে একেকজন খুনি! বাংলোর ড্রয়িং রুমে থাকা কাপড়ের পুতুলগুলোর উধাও হওয়া আর একে একে আততায়ীর হাতে পর্যটকদের খুন হওয়া দর্শকদের আগ্রহের পারদ তুঙ্গে তুলে নেয়। কাহিনী সামনের দিকে এগিয়ে নেয়।
আপনি যদি অগাথা ক্রিস্টির 'এন্ড দেয়ার ওয়্যার নান' পড়ে থাকেন তবে এতক্ষণে কাহিনী বুঝে ফেলার কথা।
আমাদের সেবা প্রকাশনীতেও একই বইয়ের অনুবাদ বেরিয়েছিল 'দ্বীপ বিভীষিকা ' নামে।
এই সিনেমাটি আমাদের সামনে তুলে ধরে ব্যক্তিজীবন এ অত্যন্ত কুৎসিত কিছুকে সযত্নে লালন করে কিভাবে আমরা বেঁচে থাকি। জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে ওঠা আর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব চলচ্চিত্রটির উপজীব্য।
আলফ্রেড হিচককের মত করে গল্প বলার ভঙ্গিমায় সিনেমাটির শুরুতেই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
আকা রেজা গালিবের কাহিনী কে সুচারুরূপে উপস্থাপনের আন্তরিক প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতন।
সচরাচর বাংলা চলচ্চিত্রে এরকম কাহিনী উপর ভিত্তি করে সিনেমা নির্মিত হয়েছে বলে জানা নেই। সে হিসেবে এমন চিত্রনাট্য বেছে নেওয়ার যে সাহস দেখিয়েছেন পরিচালক তার জন্য লম্বা একটা স্যালুট তিনি পেতেই পারেন।
আমরা দর্শকরা যারা মনে প্রাণে চাই বাংলা চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসুক এ ধরণের চলচ্চিত্র সে দিনগুলোর জন্য ইতিবাচক বার্তাই দেয়।
কলাকুশলীদের কথায় যদি আসি তবে বলতেই হয় প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে উৎরে গেছেন দারুণভাবে।
ফেরদৌস নিজস্ব গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে দারুণভাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন অভিনয় বের করে আনতে জানলে তিনিও কম যান না। লুৎফর রহমান জর্জ,শাহেদ আলী,আশীষ খন্দকারের অভিনয় এ সিনেমার বিশেষ প্রাপ্তি বলে মনে করি।আশীষ খন্দকার প্রমাণ করেছেন তিনি কত শক্তিশালী অভিনেতা। নিয়মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করলে আমাদের চলচ্চিত্রের জন্যই তা লাভজনক।
শাহেদ আলীর চরিত্রটি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তার চরিত্রের প্রয়োজনে কিছু অভিব্যক্তির দরকার ছিল, তা তিনি চমৎকার ভাবে ফুটিয়েও তুলেছেন। একই কথা লুৎফর রহমান জর্জের বেলায় খাটে বৈকি।
রাইসুল ইসলাম আসাদের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি চরিত্রের প্রয়োজনে যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন তা এককথায় অনবদ্য। সিনেমার অনেকটা সময় জুড়ে সাবেক পুলিশের চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন মাহমুদুল ইসলাম মিঠু । উঠতি মডেল হিসেবে ক্যামেলিয়া চরিত্রের জান্নাতুন নূর মুন দেখিয়েছেন তিনি সম্ভাবনাময় একজন।নবাগত আরিফ অর্ক চরিত্রের চাহিদা মিটিয়েছেন। গানের সাথে তার অভিব্যক্তি খারাপ লাগবেনা মোটেও। ঋতু সাত্তার পুরোটা সময় সংলাপে সাবলীল ছিলেন বলে মনে হয়নি।
অভ্যর্থনাকারী হিসেবে আদিবাসী কমল চাকমা ভালই করেছেন। বিশেষ করে তার চাহনি এবং চরিত্র প্রকাশের যথাযথ প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতন।
এটি একটি সাইকোলজিক্যাল সিনেমা যার প্রাণ মূলত মিউজিকাল টোনের যথাযথ ব্যবহার। এক্ষেত্রে পরিচালক মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। সিনেমার শেষ অব্দি এর ব্যবহার সিনেমাটি কে উপভোগ্য করে তুলেছে।
কিছু চকমকে দৃশ্যায়নে ঘাটতি চোখে পড়বে। কিন্তু সব মিলিয়ে উপভোগ্য।
এ রকম ভিন্নধর্মী গল্পের চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে তবেই বাংলা চলচ্চিত্র এগোবে তাতে সন্দেহ নেই।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড