• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আজ মাশরাফির জন্মদিন

পাগলাটে এক স্বপ্নবাজের কাঁধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ

  নিশীতা মিতু

০৫ অক্টোবর ২০১৮, ১০:৫৪
মাশরাফি বিন মর্তুজা
মাশরাফি বিন মর্তুজা

তার প্রতিটি পদক্ষেপ হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় সবার, তার একটুখানি থেমে যাওয়ায় থেমে যায় পুরো দেশ। বল হাতে তিনি দৌড়ালে আনন্দে উদ্ভাসিত হয় প্রতিটি মানুষ। সাধারণ মানুষকে কেউ পছন্দ করে, কেউবা অপছন্দ করে। এটাই স্বাভাবিক। তবে এই মানুষটিকে অপছন্দ করে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া বোধহয় সম্ভব নয়। তিনি সবার ভালোবাসার মানুষ, মাশরাফি। পুরো নাম মাশরাফি বিন মুর্তজা।

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ডানহাতি ব্যাটসম্যান মাশরাফি। বোলিংয়ের ধরন ডানহাতি মিডিয়াম পেস বোলার। এ দেশের ক্রিকেটকে অন্যতম এক স্তম্ভে পৌঁছে দেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্বের দাবিদার যে মানুষগুলো তাদের মধ্যে অন্যতম একজন মাশরাফি। ডাক নাম কৌশিক হলেও ম্যাশ, সুপারম্যাশ, নড়াইল এক্সপ্রেস, পাগলা, গুরু... এমন হরেক নামেই ভক্তকুলের কাছে পরিচিত তিনি।

১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। নানাবাড়িতেই মাশরাফির বড় হওয়া। নিজের বাসা থেকে নানাবাড়ি ৫ মিনিট দূরত্বের হওয়ায় বিশেষ কোনো অসুবিধাও হয়নি থাকতে।

খেলার প্রতি মাশরাফির আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকে। বাড়ির পাশের স্কুল মাঠে বড়দের ক্রিকেট খেলতে দেখে ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় তার। দাঁড়িয়ে থাকতেন উইকেট কিপারের পাশে। ছোট মানুষ আহত হবে ভেবে বড়রা তাকে সরিয়ে দিত। হয়ত তখন থেকেই শিশু মাশরাফি ভবিষ্যতের চিত্রপটে সাজাতেন বাংলাদেশ ক্রিকেট জগতকে!

ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন বেশ পছন্দ করতেন মাশরাফি। পছন্দের কাজের তালিকায় ছিল চিত্রা নদীর বুকে দাপিয়ে বেড়ানো আর সাঁতার কাটা। বাইক চালাতে ভালো লাগে মাশরাফির। আর তাইতো প্রায়ই নড়াইলের স্থানীয় ব্রিজের এপার ওপার বাইকে চক্কর দেন। নিজের শহর, শহরের মানুষগুলোকে ভীষণ ভালোবাসেন মাশরাফি। প্রতিদানে নিজেও পেয়েছেন নিখাদ ভালোবাসা। তাইতো নড়াইলে খ্যাতি মিলেছে “প্রিন্স অব হার্টস” উপাধির।

যার বোলিং নৈপুণ্যে বারবার হতবাক হই আমরা সেই মাশরাফি কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে পছন্দ করতেন ব্যাটিং। যদিও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটধারী বোলার তিনি এবং সমর্থকদের কাছে “নড়াইল এক্সপ্রেস” নামে পরিচিত।

২০০১ সালে টেস্টের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে মাশরাফির। ২০০৯ পর্যন্ত এই ফরম্যাটে খেলেছেন মোট ৩৬টি ম্যাচ। আদায় করেছেন ৭৮টি উইকেট। অবসরের ঘোষণা না দিলেও টেস্টে হয়তো আর ফিরবেন না তিনি।

একই বছর ওয়ানডেতে অভিষেক ঘটে এই গতি তারকার। সর্বশেষ এশিয়া কাপের ফাইনাল পর্যন্ত ৫০ ওভারের ১৯৬টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে তুলে নিয়েছেন ২৫০টি উইকেট (এখন পর্যন্ত ২৫১)। ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টিতে অবসর নেওয়া মাশরাফির সংগ্রহ ৫৪ ম্যাচে ৪২টি উইকেট।

শরীরের জোর থেকে যার মনের জোর বেশি তিনি মাশরাফি। নিজের প্রচণ্ড কঠিন মানসিক শক্তির বলে বারবার থেমে গিয়েও আবার সামনে এগিয়েছেন। ইনজুরি নামক ক্যারিয়ার-ঘাতি বিপদকে অভিষেক থেকে সঙ্গী করে চলছেন এই পেসার। বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন ইনজুরিকে। হাসপাতালের ভয়ানক ছুরি-কাঁচি আর সার্জারিকে তোয়াক্কা না করে বারবার নামছেন সবুজ গালিচার মাঠে। দৌড়ে যাচ্ছেন নিজের দলের জন্য, নিজের দেশের জন্য।

কোনো দলের বিপক্ষে যতবার মাঠে নেমেছেন তার চেয়ে বেশি বোধহয় দাঁড়িয়েছেন ইনজুরির বিপক্ষে। কতশত বার যে মাশরাফি ইনজুরিতে কাতরাতে কাতরাতে মাঠ ছেড়েছেন তার হিসেব করলে ভুল করবেন যে কেউ। তবু বারবার ফিরে এসেছেন তিনি, নতুন শক্তিতে, নতুন উদ্যমে। অবশ্য যে মানুষটির প্রতিটি হৃদস্পন্দন জুড়ে দেশ আর দেশের মানুষ, এমন দুঃসাহস তো তাকেই মানায়!

বার বার বাদ পড়ে দলে ফেরত আসার জন্য ভারতের ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলিকে ‘কামব্যাক কিং’ নামে ডাকা হর। বার বার ইনজুরিতে পড়েও বীরদর্পে প্রত্যাবর্তন করা মাশরাফিকে তবে কী বলে ডাকা উচিত?

মাশরাফির চিকিৎসক অস্ট্রেলিয়ান শল্যবিদ ডেভিড ইয়াং। ২০০৩ সাল থেকে মাশরাফির দেখভালের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। প্রতিবার মাঠে খেলতে নামেন মাশরাফি আর চমকে ওঠেন ডেভিড। অবিশ্বাস্য চোখে বলে ওঠেন, এও কী সম্ভব! এমন ইনজুরি থেকে সদ্য সেরে ওঠা একজন মানুষ কিনা ফাস্ট বোলিং করছে! রান বাঁচাতে হুট-হাট লাফঝাঁপ দিচ্ছে! তিনি হতবাক হয়ে যান আর পরের বার মাশরাফি ফের ইনজুরিতে পড়লে হয়ত মনে মনে হেসে বলেন, আমাকে আরেক বার হতবাক কর, পাগলা। বার বার অবাক করে দাও।

আসলে ইনজুরিতে পড়ে বারবার ফিরে আসার মন্ত্র জানেন মাশরাফি। সেই অদৃশ্য মন্ত্রের জোরে জয় করেন সব বাঁধা। দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে জিতেছেন, দলকে জিতিয়েছেন। আর তাইতো মাশরাফি কেবল ক্রিকেটার পরিচয়ে আটকে থাকেন না। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি হয়ে যান সুপারম্যানের মতো সুপারম্যাশ। হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণা আর সাহসের উৎস।

কী মন্ত্রের জোরে ইনজুরিতে পায়ের নিচে পিষে খেলেন মাশরাফি? তিনি নিজেই জবাব দেন, ‘বার বার ইনজুরি থেকে ফিরে আসার প্রেরণা পাই, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে। এমনও ম্যাচ গেছে আমি হয়তো চোটের কারণে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না। দুই তিনটা বল করেই বুঝতে পারছিলাম সমস্যা হচ্ছে। তখন তাদের স্মরণ করেছি। নিজেকে বলেছি, হাতে-পায়ে গুলি লাগার পরও তাঁরা যুদ্ধ করেছিলেন কীভাবে? তোর তো একটা মাত্র লিগামেন্ট নেই! দৌড়া...’

এই পাগলা আসলেই দৌড়ে যাচ্ছে। কাঁধে তার দেশের মানুষের ভালোবাসার বেশ বড় বোঝা নিয়েই দৌড়ে চলছে অবিরত। মাঠে সঙ্গীদের পরামর্শ দিচ্ছেন, এক সঙ্গে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ছেন, প্রয়োজনে একটু শাসনও করে নিচ্ছেন বড় ভাই বা অভিভাবক হিসাবে। ড্রেসিং রুমের বারান্দা থেকেও মাঠে থাকা সতীর্থদের নানা অঙ্গভঙ্গিতে সাহস দিচ্ছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন। তা লুফেও নিচ্ছেন সবাই। গুরুর চোখের ভাষা, হাতের ভাষা সবকিছু যে মুখস্ত সবার!

মাশরাফির ছেলে সাহেল মুর্তজারও জন্মদিন ৫ অক্টোবর। ২০১৪ সালের এই দিনে মাশরাফির স্ত্রী সুমনা হক সুমির কোল আলোকিত করে পৃথিবীতে আসে সাহেল।

বাবা ও ছেলের জন্য ‘দৈনিক অধিকার’ পরিবার থেকে রইলো জন্মদিনের অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। খেলে যাক মাশরাফি, জিতে যাক তার পাহাড়সম মানসিক মনোবল। আমাদের ক্রিকেট ট্রফি মাশরাফি বিন মুর্তজা আলোকিত করে রাখুন ক্রিকেটাঙ্গনের সাজানো শোকেস।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড