যুলকারনাইন আহমেদ
ব্যাঙের বিভিন্ন জাতের মধ্যে অন্যতম বিষাক্ত একটি জাত বেত ব্যাঙ (Cane Toad)। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং মেক্সিকোর বন্য প্রাণীদের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক এই বেত ব্যাঙ। প্রতি বছরই বেত ব্যাঙের কবলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে প্রচুর সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণী। এই প্রাণীর উৎপাত কমিয়ে আনা এবং একই সাথে সংরক্ষণ নিয়ে বিজ্ঞানীদের ব্যাপক চেষ্টা সম্প্রতি আলোর মুখ দেখতে সক্ষম হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, পর্তুগাল এবং ব্রাজিলীয় বিজ্ঞানীদের যৌথ একটি দল সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে বেত ব্যাঙের জেনেটিক কোড।
মাইক্রোবায়োলজি এবং মলিকুলার বায়োলজির অধ্যাপক এবং গবেষণা দলের প্রধান পিটার হোয়াইট বলেন, 'বেত ব্যাঙের প্রাচীন ইতিহাসের মতোই এর জেনেটিক্স নিয়ে আমাদের জ্ঞানে ব্যাপক স্বল্পতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউই এর জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করে দেখাতে সক্ষম হয়নি।'
প্রায় এক দশক আগে আমেরিকান একদল গবেষক এই ব্যাপারে কাজ শুরু করলেও একেবারে শেষ পর্যায়ে ডিএনএ অ্যাসেম্বলিং এর সময় বিপত্তির শুরু হয় এবং সেখানেই প্রজেক্টের ইতি ঘটে।
পুরো প্রজেক্টের সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল সিকোয়েন্সিং এবং এসেম্বলিং। গবেষণা দলের সদস্য ড. রিচ এডওয়ার্ডস এর ভাষ্যমতে, পুরো প্রক্রিয়ায় ৩৬০ বিলিয়ন বেস পেয়ার নিয়ে কাজ করা হয়েছে এবং সবশেষে সবচে উন্নত একটি উভচর প্রাণীর জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করা হয়। "আমরা প্রায় ৯০% জিনের পাঠোদ্ধার করতে সক্ষম হই এবং এর মাধ্যমে ডিএনএ'র বড় কোনো কাটা অংশ যুক্ত করা অনেক সহজ।"
নতুন এই আবিষ্কার বেত ব্যাঙ নিয়ে গবেষণায় সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে চলেছে। এর ফলে ব্যাঙের যে কোনো নতুন প্রজাতির সিকোয়েন্সিং প্রায় অর্ধেক খরচে করা সম্ভব হবে এবং যেহেতু এই জিনোম সবার জন্য উন্মুক্ত তাই অন্য যেকোন গবেষণায় এটি ব্যবহার করা যাবে।
বিজ্ঞানের এই যুগে এসেও খুব কম সংখ্যক উভচর প্রানীর জিনোম সিকোয়েন্স করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যার ফলে অন্য যে কোনো প্রজাতির তুলনায় উভচর সম্পর্কে জ্ঞানের পরিধি ছিল সীমিত। নতুন এই আবিষ্কার কেবল ব্যাঙ নয় বরং যেকোন উভচর প্রাণী সম্পর্কে নতুন তথ্য উদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখবে।
তবে সবচে আশার কথা এই নতুন আবিষ্কারের ফলে বিষাক্ত বেত ব্যাঙের প্রজনন হার অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত হবে। বেত ব্যাঙ অন্যান্য প্রাণীর জন্য হুমকি বলে বিবেচ্য হওয়ায় এর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ খুবই দরকারি একটি বিষয়। ইতোপূর্বে ইউরোপে খরগোশের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে জিনোম সিকোয়েন্স থেকে আবিষ্কৃত ভাইরাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো। ঠিক একইভাবে বেত ব্যাঙের জিনোম থেকে এরই মাঝে ৩ টি নতুন ভাইরাসের জন্ম হয়েছে যা থেকে বিজ্ঞানীরা আশা করেন নতুন ভাবে এর সংখ্যা হ্রাস করা সম্ভব।
ব্যাঙের প্রজনন বিদ্যা সংক্রান্ত গবেষণায় অন্যতম বিশেষজ্ঞ এলিস রুশো বলেন, 'ব্যাঙের সংখ্যা হ্রাসের জন্য উপযোগী ভাইরাস আবিষ্কারের অন্যতম প্রধান শর্ত ব্যাঙের ডিএনএ এবং আরএনর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। ডিএনএ'র মাঝেই ভাইরাস আবিষ্কারের ছোটখাটো বিষয় লুকিয়ে থাকে। যেকোন প্রাণীর ডিএনএই এর প্রাচীন সংক্রমণ সম্পর্কে ভাল ধারণা দিতে পারে।'
এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত তিনটি ভাইরাসের মাঝে কেবল একটি ভাইরাসেরই বেত ব্যাঙের ক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়েছে। যদিও বাকি দুটির ক্ষেত্রেও ভাল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন গবেষকগণ।
এলিস রুশো বলেন, "আমরা এখন পর্যন্ত একটি রেট্রোভাইরাস, একটি পিকোরনা ভাইরাস এবং একটি সারকো ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছি। যা একইসাথে ব্যাঙ, সরীসৃপ এবং মাছেদের বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে একইরকম আচরণ প্রদর্শন করে। এদের মাঝে দুটি ভাইরাসের পরবর্তীতে বায়োকন্ট্রোল এজেন্ট হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা রাখার ব্যাপারে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে।"
তবে গবেষণা দলের প্রধান পিটার হোয়াইট এখনই সবকিছু নিয়ে উল্লসিত নন। বিবৃতির শেষ পর্যায়ে হোয়াইট বলেন 'আমাদের এখনও প্রচুর কাজ বাকি। এই গবেষণা মাত্রই আমাদের শুরু। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বেত ব্যাঙের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করা।'
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড