• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ, ভাঙনের সুর বিকল্পধারায় 

  একে আজাদ

১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:১৮
ড. কামাল
ফাইল ছবি

বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীকে বাদ দিয়েই ঘোষণা করা হলো বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া না হওয়ার বিষয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে বিকল্পধারায়। এমনকি এরই মধ্যে দুইজনকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।

শনিবার (১৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সন্ধ্যায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না নতুন জোটের ঘোষণা দেন।খালেদার মুক্তিসহ সাত দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য ঘোষণার মাধ্যমে ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ সব কালো আইন বাতিল করা।

এদিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া না হওয়ার বিষয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে বিকল্পধারায়। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি জেলার নেতারা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর ফলে বিকল্পধারায় ভাঙন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। এমনটা নিশ্চিত করেছেন বিকল্প ধারার মধ্যম সারির এক নেতা।

এরই মধ্যে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক জানে আলম হাওলাদারকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিকল্পধারার সিনিয়র সহসভাপতি শাহ আলম বাদল বলেন, ‘বি চৌধুরী ও মাহী বি চৌধুরী মিলে যা করছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বিকল্পধারা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারাও আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। আমরা একমত আছি।’ বহিষ্কারের বিষয়টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন বি. চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম।

শনিবার (১৩ অক্টোবর) বিকালে রাজধানীর বেইলি রোডে ড. কামালে হোসেনের বাসায় বৈঠকের কথা থাকলেও বৈঠক করতে এসে ফিরে গেছেন যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ফিরে যাওয়ার পূর্বে মাহী বি চৌধুরী এই ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি জানান, একটি মহল জাতীয় ঐক্য চায় না। ফলে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সন্ধ্যায় বিকল্পধারার বারিধারা অফিসে সংবাদ সম্মেলন করার কথাও জানিয়েছেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, বি. চৌধুরী ও মাহী বি. চৌধুরীর সঙ্গে সরকারের আঁতাত রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তাদের বিশ্বাস করা যায় না। এ কারণে তাদের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে বিকল্পধারায় ভাঙন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মাহী বি চৌধুরী বলেন, ‘বিকল্পধারায় বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মাহী বি চৌধুরী ও মেজর মান্নান ছাড়া আর কারও নেতৃত্ব আছে নাকি? বিকল্পধারায় এই তিনজনই যথেষ্ট। দলে আর কী ভাঙন আসবে?’

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারাদেশে বিক্ষোভ; নির্বাচন কমিশন ঘেরাও ও সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ; রাষ্ট্রপতি, নিবার্চন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ার মতো বেশ কিছু বিষয় নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কয়েকজন নেতা।

একটি সূত্র জানায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বি. চৌধুরীকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় না রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন। যদিও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাখার বিষয়ে আগে থেকেই আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল ড. কামাল ও তার সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে অতিথি ছিলেন- বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ওইদিন তারা আন্দোলনে একমঞ্চে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। এরই মধ্যে বি. চৌধুরীর সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব ও টানাপোড়েন তৈরি হওয়ায় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় তাকে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে :

১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।

২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

৪. কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতার ব্যক্তিদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল করতে হবে।

৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।

৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশে কোনো প্রকার বিধি নিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনের সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যেকোনো ধরণের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।

৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরণের নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড