• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পিতা-মাতার অধিকার

  অধিকার ডেস্ক

২১ মে ২০১৮, ১৬:০৪
প্রতিকী ছবি

পিতা-মাতা সন্তানের জন্য সব চেয়ে বড় সম্পদ। পিতা-মাতার চেয়ে আপন আর কেউ নয়। সৃষ্টিকর্তার অধিকারের পর প্রধান অধিকার হচ্ছে মাতা-পিতার অধিকার। মাতা-পিতা সন্তানকে লালন-পালন করে, তাই তাদের মর্যাদা ও অধিকার পরবর্তীতে তেমনই। সন্তানের কর্মক্ষম হওয়ার পর থেকেই পিতা-মাতার প্রতি তার দায়িত্ব বর্তায়। তাদের অন্ন ও বাসস্থানের জন্য প্রচেষ্টা বা সুব্যবস্থা, অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সন্তানেরও কর্তব্য। মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার হচ্ছে- অন্যায় ও পাপ ব্যতীত সব ক্ষেত্রে তাদের আনুগত্য করা। তাদের সঙ্গে কোমল আচরণ করা। তাদের হৃদয়ে আনন্দ দেয়া। তাদের চিন্তায় চিন্তিত হওয়া। তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের সঙ্গে ভাল আচরণ করা। তাদের কোনো ধরনের কষ্ট ও সমস্যা দূর করা সন্তানের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। মাতা-পিতাকে অবজ্ঞা করা, তাদের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির উপর ধ্যান না রাখা, সর্বোচ্চ সুন্দর আচরণ করতে না পারা চরম দৃষ্টতা। পিতা-মাতার দ্বারা সন্তানের কোনো ক্ষতি হলেও তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। তা সত্ত্বেও পিতা-মাতার সাথে খারাপ ব্যবহার করার যথেষ্ট চিত্র রয়েছে বর্তমান সমাজে। সমাজে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সন্তান নিজেই তার ব্যয়ভার বহন করে চলতে পারে না। তখন তার পক্ষে সম্ভব হয় না পিতা-মাতার ব্যয়ভার বহন করা। আবার যাদের সক্ষমতা আছে তারা সঠিক শিক্ষার অভাবে পিতা-মাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অন্য দিকে। তাদের পরিণতির চিত্রও ভয়াবহ।

ইসলামে পিতা-মাতার প্রতি জীবিত অবস্থায় ৭টি ও মৃত্যুর পর ৭ টি মোট ১৪ টি হক বা অধিকার সন্তানকে বিধান আকারে দেয়া আছে। জীবিত অবস্থায় পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, মনে-প্রাণে ভালোবাসা, সর্বদা তাদেরকে মেনে চলা, তাদের খেদমত করা, তাদের প্রয়োজন পূরণ করা, তাদের ভাল, নিরাপদ ও শান্তিতে রাখার চেষ্টা, নিয়মিত সাক্ষাৎ ও দেখাশোনা করা। আর মৃত্যুর পর পিতা মাতার মাগফেরাতের জন্য দোয়া করা, সওয়াব পৌঁছানো তাঁদের সঙ্গী-সাথী ও আত্মীয় স্বজনদের সাহায্য করা, ঋণ পরিশোধ ও আমানত আদায় করা, শরীয়তসম্মত ওসিয়ত পূরণ করা, সাধ্যমতো তাঁদের কবর জিয়ারত করা। হাদীসে আছে, মাতা-পিতা হচ্ছে আল্লাহর অপার নিয়ামত। তাই তাদেরকে অবজ্ঞা করা স্বয়ং আল্লাহকেই অবজ্ঞা করার শামিল। মাতা-পিতার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির উপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি নির্ভরশীল। মাতা-পিতার সাথে সর্বোচ্চ সুন্দর আচরণ করতে হবে। পিতা-মাতা সন্তানের কোনো ক্ষতি করলেও তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। পিতা-মাতাকে সম্মান করলে ভবিষ্যত প্রজন্মের দ্বারা সম্মান পাওয়া যাবে। নিজের সন্তানকে ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।

মাতা-পিতার ব্যয়ভার বহন না করে তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে বা লঞ্চ-রেল স্টেশনে ফেলে যাওয়ার চিত্রও রয়েছে। যাদের সক্ষমতা আছে তারাও অনেকে সঠিক শিক্ষার অভাবে পিতা-মাতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অন্য দিকে। অথচ, সন্তানের অসুখে, বিপদে-আপদে বাবা-মায়ের তাদের ফেলে যাওয়ার ঘটনা বিরল। স্নেহ, সম্মান ও ভালোবাসা দিয়ে সবকিছুই জয় করা যায়। সকল পিতা-মাতাই আপন সন্তানকে স্নেহ করেন। সন্তানেরা সবাই সবার দায়িত্বপালন করলেই পিতা-মাতার অধিকার সংরক্ষিত হয়। তাদের সাথে নরম স্বরে কথা বলা, তারা গরিব হলে তাদের তাদের সুখ শান্তির জন্য সর্বদা নিযুক্ত থাকা, তাদের কল্যাণ কামনা করা, তাদেরকে কষ্ট না দেওয়া, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার চেষ্টা করা, তাদের মারা যাওয়ার পর সৎকারের উত্তম ব্যবস্থা করা, তাদের ঋণ পরিশোধ করা, তাদের জন্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি, পিতা-মাতার এই অধিকারগুলো দায়িত্বশীল ও সুযোগ্য সন্তানদের উপরেই বর্তায়।

মাতা-পিতা সন্তানকে লালন-পালন করে। তার অন্ন ও জীবিকার ব্যবস্থা করে। অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তাদের প্রশান্তির জন্য তারা কষ্ট করে। তাদের সব ধরনের সুব্যবস্থার জন্য নিজেদের ওপর সার্বিক চাপ সহ্য করে। সন্তানের সুখের জন্য বিভিন্ন কষ্ট স্বীকার করে। তার পরিপক্বতা ও পরিপূর্ণতার জন্য তাকে শিক্ষা প্রদান করে। তাই মাতা-পিতার সঙ্গে কোমল আচরণ করা, তাদের হৃদয়ে আনন্দ দেয়া, হাত খুলে তাদের জন্য খরচ করা, তাদের চিন্তায় চিন্তিত হওয়া সন্তানের কর্তব্য। তাদের আত্মীয় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা, তাদের কোনো ধরনের কষ্ট ও সমস্যা দূর করা, আজীবন তাদের ভালোবাসা এগুলোও সন্তানের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। মাতা-পিতার সঙ্গে অবাধ্যতা হচ্ছে, মাতা-পিতার সঙ্গে অহঙ্কার করা, তাদের মারধর করা, গালাগাল, অপমান ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। স্নেহ, সম্মান ও ভালোবাসা দিয়ে সবকিছুই জয় করা যায়। সকল পিতা-মাতাই আপন সন্তানকে স্নেহ করেন। সন্তানেরা সবাই সবার আপন, আপন দায়িত্ব পালন করলেই সবার নিজ নিজ অধিকার সংরক্ষিত হয়। মারা যাওয়ার পরেও পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের বহুবিধ কর্তব্য রয়েছে। যেমন- তাদের সৎকারের উত্তম ব্যবস্থা করা, তাদের ঋণ পরিশোধ করা, তাদের জন্য প্রার্থনা করা, তাদের পক্ষে দান-সদকা করা, তাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের সাথে ভাল ব্যবহার করা।

আমাদের দেশে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন ২০১৩, কতগুলো বাধ্য-বাধকতার নির্দেশ দিয়েছে। এই আইনের ৩ ধারার ১, ৪, ৫ উপধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক সন্তানকে (সক্ষম ও সামর্থ্যবান) তার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের একইসঙ্গে একি স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে, তাদের উভয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধ নিবাস বা অন্য কোথাও একত্রে কিংবা আলাদা বসবাস করতে বাধ্য করা যাবে না। প্রত্যেক সন্তান তার পিতা-মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে। বিধান লংঘন করলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে; বা উক্ত অর্থদণ্ড অনাদায়ের ক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। এমনকি পুত্র বধূ বা জামাতা অথবা অন্য কোনো নিকট আত্নীয় যদি পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ প্রদানে বাধা প্রদান করেন তাহলে তিনি উক্তরূপ অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং উল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মানুষের অধিকার নিয়ে লিখবে অধিকার; লিখুন আপনিও। আপনার চারপাশে অধিকার বাস্তবায়নে আপনিও সচেষ্ট হোন, জানান সরাসরি দৈনিক অধিকারকে [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড