অধিকার ডেস্ক ২৪ জুলাই ২০১৮, ১১:২৭
সারাদিনের কাজের চাপে অবসরের সময় মেলে না বিক্রয়কর্মীদের। প্রায় সারাদিনই কাটিয়ে দিতে হয় দাঁড়িয়ে থেকে। দু’পায়ে ভর করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চালিয়ে যেতে হয় বেচা-বিক্রি। আর এর মধ্যে কেউ বসার চেষ্টা করলে তার চাকরি নট— এমনই দুর্গতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছিল ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কেরালার নারী বিক্রয়কর্মীরা।
পোশাক, স্বর্ণালংকার ও বাণিজ্যিক পণ্য বিক্রির দোকানে কর্মরত এসব নারীরা অবশেষে পাচ্ছেন ‘বসার অধিকার’। হ্যাঁ, এবার তারা কাজের ফাঁকে কিছুটা সময় বসার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
৪৩ বছর বয়সী নারী মায়া দেবী। ২০ বছর ধরে কেরালায় একটি কাপড় বিক্রির দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়ে কখনো কর্মক্ষেত্রে বসার সুযোগ মেলেনি তার। এমনকি অনুমতি মেলেনি টয়লেটে যাওয়ারও!
বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মায়া বলেন, ‘দোকানে যখন কোনো ক্রেতা থাকতেন না তখনও আমাদের বসার অনুমতি ছিল না। কেউ এর অন্যথা করতে চাইলে তার বেতন কেটে নেওয়া হত।’
বছরের পর বছর ধরে কেরালার নারী বিক্রয়কর্মীরা সহ্য করে যাচ্ছিলেন এই দুর্ভোগ ও যন্ত্রণা। তবে সম্প্রতি দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষে কেরালায় নারীদের একটি ইউনিয়ন সফল হয়েছে নিজেদের বসার অধিকার আদায় করে নিতে।
ইউনিয়নের নেত্রী বিজি পালিতোদি (৪৮) সব দুর্ভোগে ভোগা নারীদের কথা চিন্তা করে, ‘রাইট টু সিট’ বা ‘বসার অধিকার’ নামে একটি আন্দোলন গড়ে তোলেন।
পালিতোদি জানান, কেবল ১৬ বছর বয়সে একটি দর্জির দোকানে তিনি কাজ করা শুরু করেন। কাজ করতে গিয়ে মায়া দেবীর মতো নারীদের সঙ্গে পরিচয় হয় তার, যারা বিভিন্ন দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসাবে কাজ করেন। তাদের এসব যন্ত্রণা, কষ্ট আর দুর্ভোগের কথা শুনে তিনি সবার জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন।
আন্দোলনের শুরুটা হয় ২০০০ সালে। তখন তিনি বিক্রয়কর্মী হিসাবে নিয়োজিত থাকা নারীদের সঙ্গে বসে তাদের বেতন ক্ষেত্র এবং কর্মস্থলের পরিবেশে যেসব ছাড় দিতে হয় তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।
এসব বৈঠকে উঠে আসে ভয়াবহ সব তথ্য। টয়লেটে যাওয়ার অনুমতি না থাকায় এসব কর্মীরা পান করতেন অল্প পরিমাণে পানি যা রীতিমত তাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের ছিল না বসার অনুমতি। এমনকি তারা বসছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হত সিসিটিভির মাধ্যমে। নিয়মের অন্যথা হলে কেটে নেওয়া হতো বেতন।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের এসব দুর্দশা দেখে পালিতোদি একটি ইউনিয়ন গঠন করেন। যার নাম দেন ‘পেনকোতাম’ অর্থ ‘নারীদের ভিড়’। ‘বসার অধিকার’ আদায় হলেও এই ইউনিয়নটি এখনও নারীদের বেতন ও কর্মপরিবেশ নিয়ে কাজ করছে।
তাদের আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি কেরালায় শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। গত ৪ জুলাই কেরালা সরকার কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের ‘বসার অধিকার’ দিতে শ্রম আইন সংশোধনের ঘোষণা দেয়।
শ্রম অধিদপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘যে ধরনের ঘটনা ঘটার কথা ছিল না সেগুলো ঘটছে। তাই আমরা নারী শ্রমিকদের জন্য আইন সংশোধন করে দিয়েছি। কর্মক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের জন্য বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং টয়লেট ব্যবহারেও পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।’
তিনি আরও জানান, এই আইন অমান্যকারী দোকান মালিককে মুখোমুখি হতে হবে জরিমানার।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড