• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

খাদ্যাভাবে বিশ্বে মিনিটে মারা যায় ১০ শিশু, দিনে ১৫ হাজার

৪২ জনের হাতে ৩৭০ কোটি মানুষের সম্পদ

  এস এম সোহাগ

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৩৩
সম্পদের অসমতা ও সংকট
ধনী পরিবারের শিশুর উচ্ছিষ্ট খাবার ও যেন ক্ষুধার্ত কোন শিশুর স্বপ্নের আহার। (ছবি : সম্পাদিত)

সম্পদ বৈষম্য সর্বদা, সর্বত্র বিদ্যমান। পুঁজিবাদী, কমিউনিস্ট, গণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী, বা ধনীতান্ত্রিক সমাজই হোক তা ব্যাপার না। আয় ও সম্পদের বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে যা এভাবে চলতে থাকলে তার ভবিষ্যৎ সমাজ ব্যবস্থার জনসমতা,মানবতা কিংবা সামগ্রিকতাকে ধ্বংস করে দিবে। পৃথিবীতে সাম্যের কোন অস্তিত্ব থাকবে না, পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে কোনো শিশু জন্মের আনন্দে কোটি টাকার আতশবাজি ফুটাবে, অন্য প্রান্তে নবজাতক খাবারের অভাবে প্রাণ হারাবে। জন্মের পর নবজাতককে নিয়ে একদল উৎসবের পেছনে ব্যয় করবে মিলিয়ন ডলার আর অন্যদল সামান্য কয়েক ডলারের ওষুধের অভাবে ফুড়িয়ে যাবে নীরবেই। বৈষম্য বাড়ছে, বাংলাদেশে বাড়ছে হুহু করে।

চলতি বছর উন্নয়ন দাতব্য সংস্থা অক্সফাম ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য মোকাবিলা করার জন্য দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অক্সফামের একটি নতুন প্রতিবেদনে তারা দেখিয়েছে যে, বিশ্বের ৪২ জন শীর্ষ ধনী মানুষের সম্পদ এত পরিমাণ যা বিশ্বের জনসংখ্যার সবচেয়ে গরীব অর্ধেকের বা ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন মানুষের সম্পদের সমান। খবর ‘দা গার্ডিয়ান’।

বিশ্বে ধনী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে কল্পনাতীত হারে। ছবি : দা ইকোনোমিস্ট।

চলতি বছর জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখে অক্সফামের প্রকাশিত “বৈষম্য সংকটের অবসান ঘটানোর জন্য আমাদের অবশ্যই বিত্তবান ও ক্ষমতাবান মানুষের পরিবর্তে সাধারণ মানুষের পক্ষে অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে” শীর্ষক প্রতিবেদনে তারা দাবি করছে, ২০১৭ সালের উৎপাদিত সম্পদের ৮২ শতাংশের মালিকানা চলে গিয়েছে পৃথিবীর ধনী মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে। ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুত হারে কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত।

অর্থনৈতিক এই অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী চরম দারিদ্র্যকে ৭ বার ঘুচিয়ে দিতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের একজন পোশাক কারখানার শ্রমিক জীবদ্দশায় সর্বমোট যা আয় করতে পারবেন তা বিশ্বের শীর্ষ ফ্যাশন হাউজগুলোর একজন নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও এর মাত্র ৪ দিনেয় আয়! পক্ষান্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন নাগরিকের ১ বছরের আয়ের সমতুল্য অর্থ উপার্জন করতে এই সিইও এর এক কর্মদিবসই যথেষ্ট।

সম্পদের অসমতায় বাংলাদেশ ছুটছে দুর্বার গতিতে, ধনীর সংখ্যা ক্রমেই যেন বাড়ছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে লন্ডনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান ‘ওয়েলথ এক্স’ অতি ধনী বা ‘আলট্রা হাই নেট ওয়ার্থ’-সম্পর্কিত (ইউএইচএনডব্লিউ) একটি প্রতিবেদন এই তথ্য প্রকাশ করেছে। অতি ধনী বলে তাদেরই বিবেচনা করা হয়, যাদের সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় যাদের সম্পদ ২৫০ কোটি টাকার বেশি, তারাই অতি ধনী বলে বিবেচিত হয়েছেন।

প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, বিশ্বে অতি ধনী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। সেদেশে 'অতি ধনী' মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। দ্বিতীয় স্থানে আছে জাপান। তাদের অতি ধনী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। আর প্রায় ১৭ হাজার অতি ধনী মানুষ নিয়ে চীন আছে তৃতীয় স্থানে। তালিকায় প্রথম দশটি দেশের তালিকায় আরও আছে জার্মানি, কানাডা, ফ্রান্স, হংকং, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড এবং ইটালি।

বাংলাদেশে সম্পদের বৈষম্য বৃদ্ধির চিত্র ও বিশ্লেষণ :

কিন্তু অতি ধনী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতহারে বাড়ছে যেসব দেশে, সেই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ‘ওয়েলথ এক্স’ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৭ দশমিক তিন শতাংশ হারে এদের সংখ্যা বাড়ছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন। সেখানে অতি ধনীর সংখ্যা বাড়ছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। এরপর আছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম, কেনিয়া, ভারত, হংকং এবং আয়ারল্যান্ড।

‘ওয়েলথ এক্স’ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, 'আলট্রা হাই নেট ওয়ার্থ' বা অতি ধনী মানুষের সংখ্যা গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চীন এবং হংকং-এ। এর বিপরীতে জাপান, কানাডা, ইটালি এবং যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ধনী তৈরি হওয়ার গতি ধীর হয়ে এসেছে। যদি বিশ্ব পরিসরে দেখা হয়, অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, নতুন ধনী তৈরির ক্ষেত্রে চীন এখন আর শীর্ষে নয়। সেখানে বাংলাদেশ সবার চেয়ে এগিয়ে। ২০১২ সাল হতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৭ শতাংশ হারে অতি ধনীর সংখ্যা বেড়েছে। ভিয়েতনাম, কেনিয়া এবং ভারতও খুব বেশি পিছিয়ে নেই।

ওয়েলথ এক্স এর করা প্রতিবেদন। ছবি : ওয়েলথ এক্স।

ঢাকার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ‘সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ‘বিবিসি বাংলায়’ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই তথ্য থেকে আমি মোটেও অবাক হইনি। কারণ গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে যে একটা গোষ্ঠীর হাতে এ ধরণের সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে সেটা আসলে দেখাই যাচ্ছে। এই সম্পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া তো একদিনে তৈরি হয়নি। এটা কয়েক দশক ধরেই হয়েছে।

এখন এটি আরও দ্রুততর হচ্ছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেহেতু সুশাসনের অভাব থাকে বা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা থাকে, তখন এই সুযোগটা একটা বিশেষ গোষ্ঠীর হাতে রয়ে যায়। খুব ক্ষুদ্র একটা গোষ্ঠী সম্পদের মালিক হয়, যাদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগাযোগ থাকে। চীন এবং ভারতে একসময় যে রকম দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে, সেখান থেকে অবস্থা একটু স্তিমিত হয়ে এসেছে। সেটা একটা কারণ। আরেকটা কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে ধনী এবং গরীবের মধ্যে যে তফাৎ, এই তফাৎ অনেক বাড়ছে।

বাংলাদেশে সম্পদের একটা কেন্দ্রীভবন হচ্ছে। অর্থাৎ উপরের দিকে যারা আছে তারা সম্পদশালী হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। নীচের দিকে যারা আছে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি যতটা না হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি উন্নতি হচ্ছে উপরের দিকে যারা তাদের। উপরের পাঁচ শতাংশের হাতে আরও বেশি করে সম্পদ পুঞ্জীভুত হচ্ছে। খবর ‘বিবিসি বাংলা’।

ড. ফাহমিদা খাতুনের কথাসূত্রেই বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈষম্য কি প্রভাব রাখছে তার একটা সাম্প্রতিক উদাহরণ দেয়া যাক। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার দোহারে অর্থাভাবে শিশু সন্তানকে দুধ কিনে দিতে না পেরে নিজের মা লবন খাইয়ে দেন। যার ফলে শিশুটি মারা যায় কিছুক্ষণের ভেতরেই। এই শিশু হত্যার অভিযোগ মায়ের দিকে, আদতে কি মা-ই সম্পূর্ণরূপে দায়ী? যে দেশে কোটিপতি বাড়োছে বিদ্যুতের গতিতে সেখানে সামান্য দুধ কিনে দিতে না পারার সংখ্যাও নেহায়ত কম নয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য বিদ্যমান থাকাকালীন কখনই রাষ্ট্রের সামগ্রিক,সামাজিক উন্নতি পরিষ্ফুটিত হতে পারে না।

চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে 'বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৭-১৮ : প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সিপিডি। এতে জানানো হয়, ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে মানুষের আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। ২০১৬ সালে দেশের মানুষের মোট আয়ের ০.২৩ শতাংশ আসে সবচেয়ে দরিদ্রদের পাঁচ ভাগ থেকে, যা ২০১০ সালে ছিল ০.৭৪ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬ সালে মোট আয়ে সবচেয়ে ধনী পাঁচ শতাংশের অবদান ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ ছিল বলে সিপিডির হিসাব।

অর্থাৎ ধনীরা ২০১০ সালে যা আয় করতেন, ২০১৬ সালে এসে এর চেয়ে বেশি আয় করছেন, অন্য দিকে আয় কমেছে গরিবদের। সিপিডির হিসাবে, সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ শতাংশের খানা প্রতি আয় (হাউজহোল্ড ইনকাম) ২০০৫ সালে ছিল ১১০৯ টাকা, যা কমে ২০১৬ সালে ৭৩৩ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ধনী পাঁচ শতাংশের খানা প্রতি আয় ৩৮ হাজার ৭৯৫ থেকে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা।

২০১০ সালে দেশের মোট সম্পদের ৫১ দশমিক ৩২ ভাগ ছিল সর্বোচ্চ ধনী পাঁচ শতাংশের কাছে, অন্যদিকে ০.০৪ ভাগ ছিল সবচেয়ে দরিদ্র পাঁচ ভাগের কাছে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে প্রবৃদ্ধির সুফল পৌঁছায়নি। গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে, ধনীরা আরও ধনীহচ্ছে।’

সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রযাত্রার মধ্যে এই বৈষম্য বাড়ার জন্য ‘প্রবৃদ্ধির গুণগত মানের অভাবকে’ দায়ী করেন সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য। দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমরা যতখানি না প্রবৃদ্ধির পরিমাণ নিয়ে চিন্তিত থাকতাম, এখন সময় হয়েছে সেই প্রবৃদ্ধির গুণগত মান নিয়ে চিন্তা করার। প্রবৃদ্ধি যে পরিমাণ মানুষকে উপরে তোলার কথা সে পরিমাণ তুলতে পারছে না।’

সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য। ছবি : সিপিডি।

তিনি জানান, ২০০০ থেকে ২০০৫ সালে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১০ থেকে ২০১৬ সালে নেমে হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৩ থেকে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থনৈতিক বৈষম্য ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা দেবপ্রিয়র। সামষ্টিক অর্থনীতির অগ্রযাত্রার মধ্যে এই বৈষম্য বাড়ার জন্য ‘প্রবৃদ্ধির গুণগত মানের অভাবকে’ দায়ী করেন সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।

অর্থনৈতিক বৈষম্য কি আর এর প্রভাবই বা কেমন :

ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয় ও সম্পদগত অসমতাকেই অর্থনৈতিক বৈষম্য বলা হয়। সম্পদের অসম বন্টন এবং আয়ের পার্থক্যের কারণেই এই বৈষম্যের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এটা যেমন একটি দেশের সমাজিক কাঠামোতে ব্যক্তি, শ্রেণী ও গোষ্ঠীতে বিরাজ করে তেমনি বৈশ্বিক পরিমন্ডলে দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে ও বিভিন্ন ভৌগলিক অঞ্চলের মধ্যেও তা বিরাজমান। ধনী-দরিদ্রের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশ্বের দেশগুলি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক আয়ের ভিত্তিতে সদস্যদেশগুলোকে নিম্ন আয়ের দেশ, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং উচ্চ আয়ের দেশএই চার শ্রেণীতে বিভক্ত করেছে।

বিশ্বব্যাংকের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখনও নিম্ন আয়ের দেশ। যদিও সম্প্রতি দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে তথাপি বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য শেষ হচ্ছেই না । যা বাংলাদেশের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নয়নে একটা চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর দৃষ্টিকোণেও যেন অক্সফামের প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যের দিকেই মত দেয়। তার মতে, বাংলাদেশের মূল সমস্যাটা হলো বৈষম্য। দারিদ্র্য এই বৈষম্য থেকেই সৃষ্টি। ধনী গরীবকে শোষণ করে, গরীবকে কর্মক্ষম হতে দেয় না, এবং ধনী শোষণ করে যা পায় তা ভোগ করে এবং যা বাঁচে তা বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। গরীব মানুষ অন্য কিছু উৎপাদন করতে পারে না, হতাশা ও সন্তান ভিন্ন। ফলে সে আরো গরীব হয়। অপরাধ বাড়ে, বাড়ছে, আরো বাড়বে। বিদেশ নির্ভরতা বাড়ে, বাড়ছে, আরো বাড়বে। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের ছবি। অন্য সমস্যা রয়েছে হাজারে হাজারে, কিন্তু সবগুলোই বৈষম্যের সঙ্গে বাঁধা। আসল গণতন্ত্রটা ওখানেই।আর গণতন্ত্রের কথা যে বলি তার মূল কথাটাই হলো অধিকার ও সুযোগের সাম্য। এ না থাকলে গণতন্ত্র থাকার প্রশ্নই ওঠে না। ওই অধিকার ও সুযোগের সাম্য কী পরিমাণে রয়েছে তার যদি হিসেব করি তাহলেই জানতে ও বুঝতে পারবো বাংলাদেশে গণতন্ত্র কতটা আছে, বা তার ভবিষ্যত কী?

'গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০১৭'তে বাংলাদেশের চিত্র। ছবি : স্ক্রল ইন।

বৈষম্য ইংরেজ আমলে ছিল। ইংরেজ ও বাঙ্গালি এক ছিল না। বৈষম্য পাকিস্তান আমলে ছিল। পাঞ্জাবি ও বাঙ্গালি এক ছিল না। বৈষম্য বাংলাদেশ আমলেও রয়েছে। বাঙ্গালি ও বাঙ্গালি এক নয়। মূল তফাৎ অর্থনৈতিক। আমরা ইংরেজ হটিয়েছি, পাকিস্তানীদের তাড়িয়েছি, কিন্তু তবু বৈষম্য দূর করতে পারি নি। আর সে জন্যই দুর্দশা ঘুচছে না। স্বস্তি নেই, অগ্রগতিও নেই। এগুতে হলে দু’পায়ে হাঁটতে হয়, একটি পা যদি খোঁড়া থাকে, তাহলে যা করা যায় তাকে হাঁটা বলা চলে না। অথচ আমরা দৌড়াচ্ছি। আশঙ্কা রয়েছে, অচিরেই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়বো।

দারিদ্র্য ঘোচানোর চেষ্টা যে নেই, তা নয়। আছে, সরকারি উদ্যম আছে, ছিটেফোঁটা এনজিওরা রয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কারণ দারিদ্র্যের আসল কারণ যে বৈষম্য তা কমিয়ে আনার চেষ্টা নেই। রোগের কারণ না জেনে লক্ষণ ধরে টানাটানি করলে রোগ সারবে কি? সারবে যে না তাতো দেখতেই পাচ্ছি। আমরা গণতন্ত্র চাই। কিন্তু গণতন্ত্র আসবে না দারিদ্র্য থাকলে। আর দারিদ্র্য যাবে না বৈষম্য থাকলে। সম্পর্কটি এই রকমেরই। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার শোষণ করতো, এখন হয়তো করে ২২শ পরিবার; এবং এরা পরিচয়ে বাঙ্গালি। এই পরিচয়ের গৌরব নিয়ে গরীব বাঙ্গালি যে আহ্লাদে আটখানা হবে তার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। লক্ষণ বরঞ্চ উল্টোরকম। বিস্ফোরন্মুখ। যাত্রা বৈষম্য নিরসনের দিকে নয়। যাত্রা উল্টো দিকে, তাই বিস্ফোরণের আশঙ্কা বাড়ছেই, কমছে না। এটা যেন না ভুলি। অনেকেই ভাবেন, পালাবেন। কিন্তু পালাবেন কোন পথে, কোন সীমান্ত পার হয়ে, কোন সমুদ্র সাঁতরে?

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বৈষম্যের দিকে একটু নজর দেয়া যাক:

সেখানে এই বৈষম্য কিভাবে বিস্তার লাভ করছে আর কিভাবেই বা এর দ্বারা বিশ্বে চরম দরিদ্রের অভিশাপে মানবতা জড়িয়ে যাচ্ছে তার দিকে আলোকপাত করা যাক,

অক্সফামের করা সেই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় যে, ৪২ জন মানুষের সম্পদ এখন বিশ্বের দরিদ্রতম অর্ধেক মানুষের মোট সম্পদের সমান । গত বছর, অক্সফাম দাবি করেছিলেন যে বিশ্বের দরিদ্রতম অর্ধেকের এই সম্পদের সমতুল্যের মালিকানাধীন মাত্র ৮ জন, কিন্তু এখন সংশোধিত ডাটা সেট ব্যবহার করে তার থেকে ভিন্ন ফলে উপনীত হয়েছেন তারা। সর্বশেষ তথ্য ব্যবহার করে সংগঠনটি গত বছরের পরিসংখ্যানকে পুনর্নির্মিত করেছে তখন জানায় ২০১৬ সালের ৮ জন ছিলনা, ছিল ৬১ জন।

সম্পদ ও আয়ের অসমতা। ছবি : ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম।

প্রতিবেদনে অসমতার এই চক্রটি কীভাবে শেষ করতে পারা যায় তার জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে জানায়,  শেয়ারহোল্ডারদের এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য ব্যক্তিগত আয়ের লাগাম টেনে দিতে হবে, এবং সমস্ত শ্রমিকদের ন্যূনতম 'জীবনযাপন' মজুরি নিশ্চিত করতে হবে যা তাদের জীবনযাত্রার মানদণ্ডকে উন্নত করতে সক্ষম হবে।

 বেতন কাঠামোতে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হবে, নারী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। বর্তমানে যে হারে এই বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করে হচ্ছে তাতে সমতা আসতে সময় লেগে যাবে ২১৭ বছর। কাজের সুযোগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত আবশ্যক।

 স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাখাতের মতো জনসেবা মূলক কর্মসূচীতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিলিওনিয়রদের সম্পদের ওপর অধিক হারে কর আরোপ করতে হবে। অক্সফাম অনুমান করে যে, বৈশ্বিক বিলিওনিয়রদের সম্পদের ১ দশমিক ৫ শতাংশ করের টাকায় পৃথিবীর প্রতিটি শিশুর জন্য বিদ্যালয়ে যাওয়া নিশ্চিত করতে পারে।‘ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম’।

ছবি : সেভ দা চিলড্রেন।

এদিকে, দাতব্য সংস্থা ‘সেভ দা চিলড্রেন’ এর ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তারা জানায়, যুদ্ধের কারনে আর্থিক সংকটে পড়া চরম দরিদ্র দেশ গুলোতে চলতি বছরে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪৫ লাখ শিশু ন্যুনতম খাবার, প্রাণঘাতী অপুষ্টি ও চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুঝুঁকিতে আছে। যা ২০১৬ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। একদিকে যেমন উচ্চহারে বাড়ছে ধনীর সংখ্যা এবং তাদের সম্পদের পরিমাণ অন্যদিকে তেমনই বেড়ে চলছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ও তাদের মৃত্যুর হার।

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে প্রকাশিত ‘প্রতি ৫ সেকেন্ডে বিশ্বে ১৫ বছরের কম বয়সী একটি শিশু মারা যাচ্ছে’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ, ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাংকের সমন্বিত দলটি দাবি করছে, বিশ্বে ২০১৭ সালে ১৫ বছরের কম বয়সী মোট ৬৩ লাখ শিশু মারা গিয়েছে যার হিসেবে সেকেন্ডে মারা যাচ্ছে ৫ জন! এই মৃত্যুর মিছিলে ৫৪ লাখ শিশু ৫ বছরের কম বয়সের এবং ২৫ ভাগের ভাগ্যে মাত্র ১ মাস বেঁচে থাকাও জোটেনি বৈষম্য ও সংঘাতের এই দুনিয়ায়। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাপী এই মৃত্যুর অর্ধেক ঘটেছিল সাব সাহারান আফ্রিকান অঞ্চলে, ৩০ শতাংশের বেশি দক্ষিণ এশিয়ার। আফ্রিকায় জন্মের ৫ দিনের মধ্যেই প্রাণ হারাচ্ছে প্রতি ১৩ শিশুর মধ্যে ১ টি।

প্রতিবেদনটিতে বলছে, বিশ্বে শিশু মৃত্যুর নিম্নহারের দেশগুলির তুলনায় উচ্চ মৃত্যুহারের দেশগুলিতে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা ৬০ গুন বেশি হারে মারা যাচ্ছে। উন্নত, ধনী, পুঁজিবাদী দেশগুলোতেই মৃত্যুহার কম আর দরিদ্র দেশগুলোতে এই হার সর্বোচ্চ। সম্পদের সাথে মৃত্যুর হারেরে সমানুপাতিক সম্পর্ক এখানেই জড়িত।

ক্ষুধায় থাকা মানুষ ও যার মধ্যে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। ছবি : ওয়াশিংটন পোস্ট।

তথ্য, গবেষণা ও পলিসি সম্পর্কিত ইউনিসেফের পরিচালক লরেন্স চ্যান্ডি বলেন, ‘জরুরী পদক্ষেপ না নিলে ৫ বছরের কম বয়সী ৫ কোটি ৬০ লাখ শিশু ২০৩০ সালের মধ্যে মারা যাবে, তাদের মধ্যে অর্ধেক থাকেব নবজাতক।’

অর্থনৈতিক বৈষম্য ঠিক এখানেই জড়িত, বিশ্বব্যাংকের করা অন্য এক জরিপে দেখা যায়, উচ্চ আয়ের দেশের তুলনা সাহারাকেন্দ্রিক আফ্রিকান অঞ্চলের শিশুরা ১৪ গুন বেশি হারে মারা যাচ্ছে। এসব অঞ্চল চরম দারিদ্রসীমার মধ্যে বাস করে।

প্রতি পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৬’শ শিশু প্রতিদিন চরম ক্ষুধায় মারা যায়, বা প্রতি মিনিটে এক বাচ্চা ক্ষুধার তাড়নায় আর্তনাদে হারিয়ে যায়। জাতিসংঘ এই মৃত্যুর জন্য মুখ্য দায় দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী চলমান আগ্রাসনকে, সম্পদের অসম বন্টনকে। যার ফলে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গরিবেরা মরে যাচ্ছে।

ছবি : জাতিসংঘ।

‘সেইভ দা চিলড্রেন’ এর সিইও হেল থর্নিং শ্মিট বলেন, ‘২০১৮ সালে এসে কোন শিশু ক্ষুধার্ত থেকে মারা যাবে এটা লজ্জাজনক। ক্ষুধা অনিবার্য নয়। কিন্তু আমাদের বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা যেন আবার বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। আমরা ইয়েমেন, সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদানের মতো যুদ্ধক্ষেত্রের খাদ্য সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করে যুদ্ধে ক্ষুধাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে দেখেছি। আমাদের এই বিপজ্জনক প্রবণতা থামাতে হবে। সমস্ত যুদ্ধরত দলগুলিকে মানবিক কাজ সম্পন্ন করার অনুমতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতাগুলি পালন করাতে হবে। শিশুদের জীবন বাঁচানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে তহবিল বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও জোর দিতে হবে। একটা অঞ্চলে হুহু করে মানুষ বিলিওনিওর হচ্ছে অন্য এক অঞ্চলে সামান্য খাদ্যের অভাবে দিনে হাজারও শিশু মারা যাবে এটা হতে পারেনা। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’ তাদের করা জরিপে দেখা যায় বিশ্বজুড়ে অপুষ্টি ও খাস্যাভাবে ৫ বছর বা তার কম বয়সী ৬ লাখ শিশু মারা যেতে পারে।

‘হাফিংটন পোস্টে’র এক প্রতিবেদনে কোটিপতিদের সম্পদ দিয়ে বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন করা যায় কিনা তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে, আমাদের জগতের কিছু মানুষের অকল্পনীয় বেশি সম্পদ আছে আর অন্যদিকে বেঁচে থাকার জন্য নুন্যতম আহার সংগ্রহে নিত্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে অধিকাংশ মানুষকে। সৌভাগ্যক্রমে, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী কিছু মানুষ যেমন বিল গেটস এবং ওয়ারেন বাফেটের তাদের সম্পদের অতি সামান্য কিছু অংশ ব্যবহার করছেন সামাজিক দায়বদ্ধতা এড়াতে।কিন্তু,পৃথিবীর সব দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে বিশ্বজুড়ে কোটিপতিরা তাদের মোট সম্পদের শতকরার ১০ শতাংশের ও কম পরিমাণে দান করলেই হবে।

‘ওইসিডি’ অনুসারে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিশ্বের ধনী দেশগুলির ২০১১ সালে প্রদত্ত সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১৫৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার যা বিশ্বব্যাপী তৎকালীন কোটিপতিদের মোট সম্পদের মাত্র ৩ শতাংশ।

৫ বছরের কমবয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ চিত্র যা দৃশ্যত বাড়লেও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দুনিয়ায় এটা নির্মম।

‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন’ অনুসারে, ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষ পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে পারেনা এবং ফলস্বরূপ প্রতি বছর ১৬ লাখ মানুষ মারা যায় কলেরা এবং ডায়রিয়ার রোগের কারণে।

দাতব্য সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশনে’র সাবেক পরিচালক রিচার্ড স্টিয়ার্নের মতে, প্রতি বছর গড় ৫০ ডলার ব্যয়ে আমরা একজন মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দিতে পারি। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দিতে প্রয়োজন ৫০ বিলিয়ন ডলারের যা বিলিওনিয়রদের বার্ষিক উপার্জিত সম্পদের ১ শতাংশের ও কম যা প্রতি বছর ১৬ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে।

স্বপ্ন! ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য যেন স্পষ্ট চিত্রে। কেউ খুঁজে মৃত পশুর মাঝে আহার, কেউ ঝুলে হয় বিনোদিত। ছবি : সম্পাদিত।

বছরে পুষ্টির অভাব ২৬ লাখ স্কুলগামী স্কুল মারা যায়। ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির’ অনুমান করছে যে, পৃথিবীতে এসব শিশুদের জীবিত রাখতে প্রয়োজন মাত্র ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের যা বিশ্বব্যাপী ৬’শ কোটিপতির সম্পদের বছরের ১ শতাংশেরও কম। যা বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার তাড়নায় অর্ধকোটি শিশুর প্রাণ রক্ষা করতে পারে। পৃথিবীর শীর্ষ ১৫০০ ধনীর সম্পদের মাত্র ১০ শতাংশের দ্বারা বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। খোদ আমেরিকার নিয়মিত গির্জায় যাওয়া ধনীদের সম্পদের মাত্র ২ শতাংশ দিয়ে বিশ্বে সবার কাছে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

এসব এমন এক ঘৃণ্য কাজ যা দেখাচ্ছে যে, কিছু লোক ব্যাংকে কোটি কোটি ডলার জমিয়ে রাখছে অথচ লাখ লাখ মানুষ খাদ্য ছাড়াই, দূষিত পানি পান করে অসুস্থ হয়ে রোজ মারা যাচ্ছে। একদল ব্যাংকে টাকা জমাচ্ছে তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য আরেকদলের সন্তান বর্তমানেই ঝরে যাচ্ছে খাদ্যের অভাবে। প্রতিদিন আমরা প্রিয়জনের সাথে রেস্তোরাঁয় খেয়ে যে ৪-৫ ডলার বকশিস দিচ্ছি, তার থেকে ১ ডলার দিয়ে আফ্রিকান কোন শিশুর খাবার জুটতো, বেঁচে যেত শিশুটা। কবি কাজী নজরুল ইসলামের "সিন্ধু-হিন্দোল" কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'দারিদ্র্য' কবিতাটি রচনার সময় কবি যেন বৈষম্যের এই কালো দিককেই ইঙ্গিত করেছিলেন।

'পারি নাই বাছা মোর, হে প্রিয় আমার, দুই বিন্দু দুগ্ধ দিতে!-মোর অধিকার আনন্দের নাহি নাহি! দারিদ্র্য অসহ পুত্র হ’য়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ।'

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড