শব্দনীল
জীবনানন্দ সৌন্দর্য ও বোধের কবি। তিনি কবি হয়ে জন্ম নেননি। কবিতা তিনি লালন করেছেন আজন্ম। তাকে বলা হয় বাংলাসাহিত্যের ‘শুদ্ধতম কবি’। জীবনানন্দ পশ্চিমা সাহিত্যের আধুনিক ধারার নির্যাস নিয়ে বাংলা কবিতায় আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটিয়ে ছিলেন বিশ শতকের তিরিশের দশকে। তিনি কবিতা লেখাকেই জীবনের অন্যতম সংগ্রাম হিসেবে নিয়েছিলেন। কবিতা দিয়ে জীবনের গভীরতা মাপতে গিয়ে বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন তবুও কবিসত্তাকে রেখেছেন সমুন্নত।
আজ এই মহান কবির প্রয়াণ দিবস। প্রয়াণ দিবসে ওনাকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছেন তরুণ প্রজন্ম। প্রকাশ করেছেন জীবনানন্দ নিয়ে তাদের ভাবনা। চলুন দেখি তরুণ প্রজন্মের কিছু অভিমত-
আমাকে গভীর ভাবনার দেশে নিয়ে যায় জীবনানন্দ দাশ। পথের পাশের ভাঁটফুল থেকে মহাজাগতিক নক্ষত্র পর্যন্ত এর বিচরণ ক্ষেত্র। শিল্পের গভীরতা আর গাম্ভীর্য বলতে যা বোঝায়, তা মূলত জীবনানন্দ থেকে আমি পেয়ে থাকি। - কবি ফিরোজ আহমেদ
জীবনানন্দ হলেন সেই কবি যাকে পড়ার জন্য হলেও সারা বিশ্বের উচিৎ বাংলা ভাষাটা শিখে নেয়া। - কবি ও সম্পাদক কালপুরুষ
কবি জীবনানন্দ দাশ এবং তাঁর কবিতা কেমন যেনো একটা ঘোরের নাম। যে ঘোর একান্তই নিজের যাপন করতে ভালো লাগে। একা একা নির্জনে, নিভৃতে তাঁর কবিতা পড়লে মনে হয় নিজেকে পাঠ করছি, নিজের চারপাশকে পাঠ করছি। জীবনানন্দ নিজের সাথে মিশে থাকা এক ভালোলাগা যা অন্য দুজন, তিনজনের সাথে ভাগ করে নেওয়ার না, একান্তই নিজের কিছু। - আবৃত্তিকার ও ‘ধ্বনি’ আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম পাপ্পু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনানন্দ দাশ-নামটি শুনলেই একটা নিরুত্তাপ ধূসর জগতের আভাস পাই। হাজার বছরের ইতিহাসে যে কবির বিচরণ, যে কবির বিচরণ ইতিহাসের বিদর্ভ, শ্রাবস্তী নগর থেকে মানুষের ‘অন্তর্গত রক্তের ভিতর’ পর্যন্ত; বাংলাদেশের পৌষে ‘মাঠের ফাটল, শিশিরের জল’ যে কবির নজর এড়ায় না, সে কবিকে নিয়ে দু-চার লাইনে কথা বলার চেষ্টা দুঃসাহস।
জীবনানন্দ দাশ আমাদের একুশ শতক অথবা যে কোনও সময়ের প্রতিটি ইনডিভিজুয়াল মানুষের ভেতরকার কবি। তিনি রূপসী বাংলার কবি। - কবি আহমাদ ওয়াদুদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আমার ভাবনায় জীবনানন্দ দাশ ও তাঁর কবিতা ‘নিতান্তই অবচেতন মনের ধ্যানমগ্ন, আত্মগ্লানিপরিবাহী, হৃদয়-নিষিক্তকারী কবি জীবনানন্দ দাশ। যার কবিতা পাঠকের মরমে এমন বেদনার উদ্রেক ঘটায়, যা অশ্রুসিক্ত আনন্দলোকের অপার মহিমার সন্ধান এনে দেয়। তাঁর কবিতায় সঞ্চারিত বোধগুলো গতিশীল হতে হতে প্রবল ঘূর্ণি তৈরি করে, তারপর ধীরে ধীরে বোধগুলো হিমায়িত হয়ে জমাট বেঁধে থাকে একান্তই নিজের ভেতর!’ - কবি মঈন মুনতাসীর
বাংলা ভাষার গভীরে তলিয়ে নবনব ধ্বনিবহুল শব্দ বের করে এনে একটি বিশিষ্টতা নিয়ে আসেন তাঁর লেখায়। এখানে তিনি দুটি উপাদানকে বিশেষ ভাবে প্রয়োগ করে ছিলেন। একটি নতুন ধরনের বাকরীতি। দ্বিতীয়টি শব্দযোগ। শব্দযোগ বলবো। কারণ, যদিও একে নতুন শব্দ ব্যবহার বলা উচিত রীতি মাফিক, তবুও এমন ভাবে প্রয়োগ করেছেন এদের। এই শব্দগুলি জোড়া লেগে গেছে বহু ব্যবহৃত অন্যান্য শব্দের সঙ্গে। ঝর্ণার স্রোতের মধ্যে যেমন নুড়িগুলি জল-বুদবুদের মতো নরম হয়ে যায়, তেমনিভাবে বাহিরে থেকে আমদানি করা শব্দকে তিনি কোমল করে নিয়েছেন তার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে। রবারের বল, স্পলিস্টার কিংবা অবলঙ, প্রপেলার, স্কাইলাইট, মাইক্রোফোন শব্দে হোঁচট খেতে হয় না পঙক্তি পড়তে গিয়ে। - কবি ফখরুল হাসান
সে কেন জলের মত ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়?'
কেবলই সে (জীবনানন্দ) কথা কয়। বুকের ভেতরে, মাথার ভেতরে, তন্দ্রার ভেতরে, প্রেমের ভেতরে... কেবল সেই কথা কয়। - কবি চৌধুরী ফাহাদ
জীবনানন্দ দাশ নামটি নিলেই আমার যান্ত্রিক শহর বদলে গিয়ে আমি অনুভব করি নির্জন দুপুর বা রাত, চাঁদের নীল আলোয় ভেসে যেতে যেতে পৃথিবীর মানুষদের বলে যাচ্ছি -
‘দূরে-দূরে-আরো দূরে চলিলাম উড়ে, নিঃসহায় মানুষের শিশু একা, অনন্তের শুক্ল অন্তঃপুরে অসীমের আঁচলের তলে!’
জীবনানন্দ কে আমি আমার বিষাদগ্রস্ত সময়ের বন্ধু মনে করি।তিনি তো ফিরেই এসেছেন আদতে। তিনিও হয়তো জানতেন তার ইচ্ছাপূরণ হবে তাই লিখেছেন -‘মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়;অতীতের থেকে উঠে আজকের মানুষের কাছে প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে।’ - কবি মারিয়াম ছন্দা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনানন্দ দাশ প্রসঙ্গে বলতে গেলে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে সেটা হচ্ছে অনন্য পর্যায়ের এক জীবনবোধ। তার কবিতায় লক্ষ্য করা যায় অদ্ভুত সব উপলব্ধি যা খুব কম সাহিত্যরচনাকারীই তাদের লেখাপত্রে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। আমার কাছে বরারবরই তাকে মনে হয়েছে উপমার যাদুকর। তিনি আমার পছন্দের কয়েকজন অবজার্ভারদের মধ্যে অন্যতম। - কবি উদয়ন রাজীব
'প্রকৃতি প্রেম' বলতে গেলে আমার মাথায় একটি নাম সবার আগে আসে। তিনি জীবনানন্দ দাশ। বিস্তর আবেগ, কবিতায় কথার ফুলঝুরি, শব্দের আধিক্যতা, প্রেমাবেগ ইত্যাদি জীবনানন্দ তাঁর লেখায় এই চিহ্নগুলো রেখে গেছে। বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতিপ্রেমের দিক থেকে সবচেয়ে ধনাঢ্য কবি হিসেবেও তাকে সবার প্রথমে রাখতে হবে। - গীতিকার ও কবি মাহমুদ শাওন
জীবনানন্দ
আমি খুঁজে ফিরি শাঁখচিল শালিক শিমুলডালে লক্ষ্মীপেঁচা আর ধবল বকের দল এদের ভিড়ে তুমি ফিরে আসবে বলেছিলে আসো ধানসিঁড়ির তীরে এ বাংলায়? জলঙ্গির ঢেউ-এ ভেজা বাংলারই সবুজ করুণ ডাঙায়? নিরানব্বই-এ জন্মশতবার্ষিকী দেখেছিলে? এখনো কবিতা লেখো, অদ্ভুত আঁধার এক..? - কবি ও সম্পাদক আলমগীর ইমন
জীবনানন্দ দাশকে আমি কখনও এভাবে ভাবি না যে তিনি কত বড় কবি, বরং তার কবিতাগুলোকে দেখি- বাংলার আবহমান প্রকৃতিকে তিনি যে স্বার্থক ভাবে কবিতায় প্রয়োগ করেছিলেন, সেটা দেখি! কবিতাতো ব্যাখ্যা করার বিষয় নয়, হৃদয়ে অনুভব করার বিষয়, সেইখানে তিনি প্রশ্নাতীতভাবে উত্তীর্ণ! বাংলা কবিতায় হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র শুধু কবিতা লেখেননি, সম্পূর্ণ কবিজীবন যাপন করেছেন, তাদের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ একজন! আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো! - কবি ও সম্পাদক দয়াময় পোদ্দার
শ্রী কালপুরুষ,
তুমি বলেছিলে, সকলেই কবি নয়; কেউ কেউ কবি। কবি তুমিও জীবন - না না! ভুল বললাম তো। জীবনানন্দ; জীবনের আনন্দ। শুধু জীবন বললে কি আর হয়!
জীবনের আনন্দ নাম নিয়েও অথচ কেমন তুমি বরাবর গভীর বিষাদ লিখে গেলে। কি গভীর বিষাদ! কি অদ্ভুত নির্জন! হেমন্ত বুঝি খুব প্রিয় ছিলো তোমার? নবান্ন? শিশির? অশ্বত্থ গাছ কিংবা বটের পাতা? আমি কিংবা আমরা কখনো জন্ম নেবো - সেই খবরও যখন ছিলোনা, তখন দুম করে তুমি ট্রাম এক্সিডেন্ট করে চলে গেলে অন্য কোন ভুবনে। বোধ করি, তোমার স্বভাবকবি মায়ের কাছে। উনি কি এখনো তোমায় মিলু বলে ডাকেন?
সুপ্রিয় কালপুরুষ, তুমি দেখেও গেলে না - প্রজন্মের পর প্রজন্ম কতটা ভালোবাসা নিয়ে তোমায় মনে রেখেছে। শ্রী, ভালো থেকো তোমার মহীনের ঘোড়া চড়া প্রান্তরের ওপাশে।
- কবি ও গল্পকার রোকেয়া আশা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড