নাবিলা বুশরা
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (১১ অক্টোবর, ১৮৭১-৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৩) সাহিত্যিক, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা এবং প্রাচীন বাংলা পুঁথির সংগ্রাহক ও ব্যাখ্যাকার।
বৃহত্তর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদন্ডী গ্রামে ১৮৭১ সালের ১১ অক্টোবর তাঁর জন্ম। আবদুল করিম ১৮৯৩ সালে পটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কয়েকটি স্কুলে শিক্ষকতা করার পর তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে চাকরি গ্রহণ করেন এবং শেষ পর্যন্ত বিভাগীয় স্কুল পরিদর্শক পদে উন্নীত হন। ১৯৩৪ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
প্রথম জীবনেই তিনি সাহিত্যবিষয়ক নিবন্ধ রচনা শুরু করেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম তৎকালীন বিদগ্ধ সমাজের মনোযোগ আকর্ষণ করে। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে মুসলমানদের অবদান ছিল তাঁর বিশেষ আগ্রহের বিষয়। সারাজীবন তিনি প্রাচীন বাংলা পান্ডুলিপি (পুঁথি) সংগ্রহ করেন।
১৯২০-২১ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ তাঁর রচিত বাংলা পুঁথির তালিকা বাঙালা প্রাচীন পুথির বিবরণ শিরোনামে দুখন্ডে প্রকাশ করে। তাঁর সংগৃহীত পুঁথির বেশির ভাগ মুসলমান কবিদের লেখা এবং ঐগুলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে।
হিন্দু কবিদের লেখা অবশিষ্ট পুঁথিগুলি রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরকে দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত পান্ডুলিপিগুলির একটি সুবিন্যস্ত তালিকা পুঁথি পরিচিতি শিরোনামে প্রকাশ করেছে।
তিনি কেবল একজন ‘পুঁথি-সংগ্রাহক’ই ছিলেন না। পাশাপাশি তিনি পুঁথি-ব্যাখ্যাকারের দায়িত্বও পালন করেছেন অতীব যোগ্যতার সঙ্গে। গভীর আগ্রহ ও অনুরাগ নিয়ে পুঁথি পাঠ করতে করতে তাঁর মনে হয়েছিল, ‘...পুরাতন পুঁথি কঙ্কালেরই মত। কিন্তু আমি তাহার ভিতর যুগযুগান্তের রক্তধমন ও নিঃশ্বাসের প্রবাহধ্বনি শুনিয়াছি।’ [চট্টগ্রাম সংস্কৃতি সম্মেলনে মূল সভাপতির ভাষণ :১৬ মার্চ ১৯৫১]
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের বাঙ্গালা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ (১৯১৩ ও ১৯১৪) থেকে জানা যায়, মধ্যযুগের বাংলাসাহিত্যের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সৃষ্টি হয়েছে বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য সাধনায়। পরবর্তীকালে তাদের আধুনিক শিক্ষা ও মানসবিকাশে এর প্রভাব অপরিসীম।
অক্ষয়চন্দ্র সরকার সম্পাদিত ‘পূর্ণিমা’ পত্রিকার ১৮৯৬ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় তিনি লেখেন ‘অপ্রকাশিত প্রাচীন পদাবলী’। এ দিয়েই বলতে গেলে শুরু হয় সারস্বত সমাজ অভিমুখে তাঁর যাত্রা।
তিনি যখন একের পর এক পুঁথির পাঠোদ্ধার করতে থাকলেন তখনই অনুভব করলেন এগুলো প্রকাশনার গুরুত্বের কথা। কিন্তু জীবনের শেষপর্বে এসেও তিনি এগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে না পারার সেই বেদনাবোধ থেকে মুক্তি পাননি। গবেষক আবদুল হক চৌধুরীকে তিনি আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, “... আমি মোস্লেম রচিত প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্য পরিচয় নাম দিয়া প্রাচীন পুঁথির বিবরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে কয়জন ধনীর কাছে সাহায্য ভিক্ষা চাহিয়াছি। কিন্তু ধনীরা যতই ধনবান হউক, সাহিত্যের মর্যাদা বুঝে না। তাই তাদের কাছে কিছু পাইবার আশা করি না। সুতরাং পূর্ব পাকিস্তানের মারফত সাধারণের কাছে ভিক্ষার ঝুলি ধরিয়াছি। সকলে ২/৪ টাকা করিয়া দিলে আমার অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে।...”
২৬/০৬/১৯৪৭
(আবদুল হক চৌধুরীকে লেখা চিঠির একাংশ)।
এর আগে ২. ১০. ১৯৪৪ তারিখে গবেষক আবদুল হক চৌধুরীকে লেখা চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘তেঁতুল দেখিলে যেমন জিহ্বায় জল আসে, পুঁথির নাম শুনিলেও আমার তাহা না দেখা পর্যন্ত সোয়াস্তি থাকে না।’
সাহিত্যের অভিভাবক-ধারক-বাহকদের কাছেও আবদুল করিম রয়ে গিয়েছিলেন কেবল পুঁথি সংগ্রাহক হিসেবেই। পুঁথি সংগ্রহ, পাঠোদ্ধার, ইতিহাসের সন্ধান এবং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়াসকে তাঁরা কেউ উপলব্ধি করতে পারেননি।
বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসকারগণ মধ্যযুগের বাংলাসাহিত্য সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছিলেন তাতে মনে হতো বাংলা কেবল হিন্দুর ভাষা। এই ভাষায় মুসলমানের কোনো অবদান নেই।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের আবিষ্কৃত, সংগৃহীত ও পাঠোদ্ধৃত পুঁথির আলোকেই প্রধানত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, প্রাচীনকালে বাংলাভাষার যে চর্চা ছিল তাতে মুসলমান লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। বাংলাভাষার আধুনিক রূপ গড়ে উঠেছে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের সম্মিলিত সুদীর্ঘ পদযাত্রার মধ্য দিয়ে।
সপ্তদশ শতকে আলাওলের নানা রচনার অনেকগুলো পুঁথি থেকে তিনি সৃষ্টিমুখর বৈচিত্র্যপূর্ণ আলাওলকে খুঁজে বের করে আনেন। বাংলার মুসলমানের আত্মমর্যাদা বাড়ানোর পাশাপাশি অন্তর রোপন করলেন গভীর আত্মবিশ্বাস। বাঙালি মুসলমান সমাজে সম্ভব করে তুললেন পুনর্জাগরণকে।
যে সামাজিক পটভূমিতে আবদুল করিমের জন্ম ও বিকাশ তাতে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ প্রায় ছিলই না। ফলে বিদ্যায়তনিক লেখাপড়ায় বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেননি তিনি; গবেষণার পাঠ নেওয়ার জন্য পাননি যোগ্য পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু অসাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের ওপর ভর করে তিনি পথ চলেছেন। এই পুঁজি দিয়েই পুঁথি সম্পাদনার অতি উচ্চ শৈলীগত মান অর্জন করেছিলেন।
তাঁর সম্পাদনার মান কতটা উঁচু ছিল সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য আমরা হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর শরণ নিতে পারি। সাহিত্যবিশারদ সম্পাদিত নরোত্তম দাসের ‘রাধিকার মানভঙ্গ’ বইয়ের মুখবন্ধে তিনি বলেছেন,
“...শ্রী আবদুল করিম চট্টগ্রামের একটি বাঙ্গালা বিদ্যালয়ের পণ্ডিত। তাঁহার সাংসারিক অবস্থা ভাল নহে। তথাপি তিনি সাহিত্য-সেবায় অকাতর পরিশ্রম করিয়া থাকেন। বাঙ্গালা সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগের প্রশংসা না করিয়া থাকা যায় না। তিনি এই দুর্লভ গ্রন্থের সম্পাদনা-কার্য্যে যে রূপ পরিশ্রম যে রূপকৌশল, যে রূপ সহূদয়তা ও যে রূপ সূক্ষ্মদর্শিতা প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহা সমস্ত ভারতেও বোধ হয় সচরাচর মিলে না। এক একবার মনে হয় যেন কোনো জর্মান এডিটর এই গ্রন্থ সম্পাদনা করিয়াছেন।”
মুনশী শ্রী আবদুল করিম সংকলিত, বাঙ্গালা পুঁথির বিবরণ [কলিকাতা, ১৩২০ বঙ্গাব্দ] বইয়ের ‘নিবেদন’ অংশে শ্রী ব্যোমকেশ মুস্তফী জানাচ্ছেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুঁথি সংগ্রহ করতে কী ক্লেশই না স্বীকার করতে হয়েছিল তাঁকে।
“...পুঁথি অনুসন্ধান করিতে গ্রামে গ্রামে ঘুরিয়া বেড়াইবার অবসর ও ব্যয় নির্বাহের মত আর্থিক স্বচ্ছলতা তাঁহার নাই, মূল্য দিয়া তিনি পুঁথি ক্রয় করিতে পারেন এমন অর্থ ত তাঁহার নাই-ই, তথাপি কেবল মাতৃভাষার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা, প্রীতি ও ভক্তিবশতঃ তিনি জীবনের দীর্ঘকাল এই পুঁথি সংগ্রহে যথাসাধ্য ব্যয় করিয়াছেন, যথেষ্ট কষ্ট সহ্য করিয়াছেন এবং এই সকল পুঁথির আলোচনায় কাটাইয়াছেন। ... সর্ব্বাপেক্ষা তাঁহাকে যে উত্পীড়ন সহিতে হইয়াছে তাহা যেমন অদ্ভুত তেমনি বিস্ময়কর। তিনি মুসলমান, কোনো হিন্দু আঙিনায় তাঁহার প্রবেশাধিকার নাই, কিন্তু হিন্দুর ঘরে পুঁথি আছে শুনিয়া তিনি ভিখারীর মত তাঁহার দ্বারে গিয়া পুঁথি দেখিতে চাহিয়াছেন।
পুঁথি সরস্বতীর পূজার দিনে পূজিত হয়; অতএব মুসলমানকে ছুঁইতে দেওয়া হইবে না বলিয়া অনেকে তাঁহাকে দেখিতেও দেন নাই। অনেকে আবার তাঁহার কাকুতি মিনতিতে নরম হইয়া নিজে পুঁথি খুলিয়া পাতা উল্টাইয়া দেখাইয়াছেন। মুনশী সাহেব দ্বারের বাহিরে দাঁড়াইয়া হস্তস্পর্শ না করিয়া কেবল চোখে দেখিয়া নোট করিয়া সেই সকল পুঁথির বিবরণ লিখিয়া আনিয়াছেন। এত অধ্যবসায়ে, এত আগ্রহে, এমন করিয়া কোন হিন্দু অন্তত তাহার নিজের ঘরের পুঁথিগুলির বিবরণ লিখিতে বা অন্য কোন কার্য্যে হাত দিয়াছেন কিনা জানি না। মুনশী সাহেবের নিকট বাঙ্গালা সাহিত্য-সমাজের কৃতজ্ঞতার পরিমাণ যে কত বেশী তাহা ইহা হইতেই অনুমান করা যায়।”
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন জ্ঞানী একজন মানুষ। নিজস্ব স্বজ্ঞা দিয়ে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন পুঁথি সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা। আর প্রাপ্ত পুঁথি পাঠলব্ধ প্রজ্ঞা দিয়ে করেছিলেন তার বিশ্লেষণ। তাঁর সে ক্ষমতারও পরিচয় আমরা পদে পদে পাই! যেমন,
১ “... আমাদের ভাষার গ্রহণশক্তি ও প্রকাশশক্তি অসাধারণ—বিরাট রবীন্দ্র সাহিত্য ইহার অন্যতম দৃষ্টান্ত। আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি যে কোন শব্দ ও তার প্রকাশভঙ্গি বাংলাভাষা আত্মস্থ করিতে ও হজম করিতে পারে। অতি অল্পকালের মধ্যে নজরুল ইসলাম তাঁহার গদ্য ও পদ্য রচনায় এবং অজস্র ইসলামী গানে তাহার ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত দেখাইয়াছেন।”
২ “... মুসলমান হিসেবে আরব পারস্যের সঙ্গে চিরকাল আমরা একটি আন্তরিক যোগ অনুভব করিয়াছি। আবার এই দেশী আবহাওয়া ও অন্নে গঠিত গভীর সম্পর্ক ছিল একান্তভাবে এই দেশের সঙ্গেই। ফলত আমাদের সাধনা চিরকাল দুই ধারায় প্রবাহিত হইয়াছে। একটি এই দেশের সহজ অনুভূত প্রাণবন্ত জাতীয় ধারা। অপরটি মননচিন্তনের ধর্মীয় বা আদর্শমূলক ধারা। একদিকে ধর্মবোধে স্বাতন্ত্র্য সাধনা, অপরদিকে জাতীয়তাবোধ সমন্বয়ক সাধনা। এই দুই ধারায় আমাদের সাধনা চলিয়াছে।”
—কুমিল্লার পূর্ব-পাক সাংস্কৃতিক সম্মেলনে সভাপতির অভিভাষণ: ২২ আগস্ট, ১৯৫২
৩। “... সংস্কৃতির জন্ম-প্রেরণা যেখানে হইতেই হউক না কেন, সংস্কৃতির উন্মেষ, বিকাশ ও প্রসার পরিবেশ-নিরপেক্ষ নহে। এই পরিবেশের প্রধান উপাদান ঐতিহ্য। ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার অর্থ ভিত্তিকে অস্বীকার করা। মাটি ভিত্তি করিয়া তাজমহল দাঁড়াইয়া আছে। সেই মাটির গুরুত্ব অনেকখানি। ইহা ছাড়া তাজমহল তৈরী সম্ভব ছিল না। তেমনি ঐতিহ্য-সম্পর্কবিহীন সংস্কৃতি-সাধনাও অসম্ভব। ঐতিহ্যের যাহা কিছু ভাল তাহার অনুসরণ এবং যাহা কিছু নিন্দনীয়, তাহার বর্জনেই নূতন জীবনাদর্শের সন্ধান মিলে। সংস্কৃতির রূপান্তরও এইভাবেই ঘটে, অগ্রগতিও আসে এই পথে।”
— কুমিল্লার পূর্ব-পাক সাংস্কৃতিক সম্মেলনে সভাপতির অভিভাষণ: ২২ আগস্ট, ১৯৫২
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ভাবনার স্তর মাত্র তিনটি দৃষ্টান্ত দিয়েই অনুধাবন করা যায়। বোঝা যায় তাঁর মনোগঠন সম্পর্কে।
বলতে গেলে, এককভাবেই আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের বিশেষ অবদান রয়েছে আমাদের সমাজে। একালের বাংলা নববর্ষ, বসন্তমেলা, পৌষমেলা, যাত্রা, চর্যাগীতি ইত্যাদিকে জীবনযাপনের অঙ্গীভূত করে তাকে বাঙালিত্বের গৌরবময় উপকরণ হিসেবে বিবেচনা মূলত তাঁর হাত ধরে বাঙলাকে জাগ্রত করার সে সময় থেকেই।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে তার সাংস্কৃতিক শনাক্তি প্রেরনা যুগিয়েছিল যুদ্ধের সময়ও।
খুব কম চেনা এই মানুষটিকে চিনে নেওয়ার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। দেশ ও জাতি সম্পর্কে তাঁর যে উপলব্ধি সেগুলো থেকেই অনুপ্রেরণা নেওয়ার আছে। আর সে জন্য এই মানুষটিকে চেনা ও জানা প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড