• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বই আলোচনা

মুখোশ

  অধিকার ডেস্ক    ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৩৯

মুখোশ
মুখোশ- নীহাররঞ্জন গুপ্ত

বই নিয়ে আলোচনা বরাবর আমার কাছে বেশ আনন্দের বিষয়। বই নিয়ে কথা, বই নিয়ে গল্প সব বিষয়েই কথা বলতে আমার বেশ আনন্দ লাগে। তার চেয়ে ভালো লাগে সবাইকে নিজের পড়া কিছু একটা নিয়ে জানাতে। আজ রইলো আমার পড়া ভালোলাগার একটা বই নিয়ে কিছু কথা।

বইয়ের নাম: মুখোশ লেখক: নীহাররঞ্জন গুপ্ত প্রকাশক: মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রচ্ছদ: আশু বন্দ্যোপাধ্যায় ধরণ: রহস্য উপন্যাস পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৪৩ মূল্য: ১২৫ টাকা (অরিজিনাল ইন্ডিয়ান প্রিন্ট)

নাম শুনে এবং প্রচ্ছদ দেখেই অনেকটা আঁচ করা যায় যে এটা একটা রহস্য উপন্যাস। বইয়ের নামকরণটা আমার খুব ভালো লেগেছে। না, মুখোশ বলতে এখানে আক্ষরিক অর্থে কোনও মুখোশকে বোঝানো হয়নি। আমাদের সমাজে, আমাদের চারপাশে যেসব মানুষরূপী বহুরূপী শয়তান মুখে ভদ্রলোকের মুখোশ এঁটে চলাফেরা করছে তাদের নিয়েই এই গল্প।

গল্পের শুরু এক কুঠিবাড়িতে। কলকাতা থেকে বেশ দূরের একটা শহর। সেই শহরের একদম শেষ সীমানায় জঙ্গলঘেষা একটা কুঠিবাড়ি কিনে বসবাস শুরু করেছিলেন মেজর রাজেশ্বর চৌধুরী। যৌবনে ভাগ্য তার প্রতি বিরূপ ছিল সবসময়, অন্যান্য ভাইয়েরা লেখাপড়া শিখে টাকা পয়সা নাম কামিয়ে উপরে উঠে গেছে। কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি। সেজন্যে সবাই তাকে কৃপার চোখে দেখতো। যুদ্ধের সময় (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) যুদ্ধে চলে যান রাজেশ্বর চৌধুরী। সেখান থেকে ফিরে লটারি পেয়ে যান এক লক্ষ টাকার। তারপরই কুঠিবাড়িটা কিনে বসবাস শুরু করেন এই জঙ্গলে। একজন নার্স আছে দেখাশোনার জন্য, একজন বাবুর্চি ও একজন ভৃত্য।

এমন সময় সব আত্মীয় স্বজনকে চিঠি দিয়ে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। তিনি তার উইল সবার সামনে পড়ে শোনাবেন। উইলটা একটু অদ্ভূত। শর্তগুলো আরও অদ্ভূত। কিন্তু উইল পড়ে শোনাবার আগেই খুন হয়ে যান রাজেশ্বর চৌধুরী। তিনি যে খুন হবেন এটা তিনিও জানতেন। উইলেও সেরকম উল্লেখ করে গেছেন। উনি বলেছিলেন উনার চিঠি পেয়ে সবার শেষে যে আসবে তার আসার ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি আমি খুন হয়ে যাই তাহলে শেষোক্ত জন আমার সম্পত্তির অর্ধেক অংশ পাবে। বাকি অর্ধেক সবার মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে।

এদিকে সরকার পক্ষ থেকে ইন্সপেক্টর সেন কে পাঠানো হয় তদন্ত করতে। তদন্ত করতে এসে তিনি বেশি সুবিধা করতে পারেন না ঠিক। আর এইদিকে রাজেশ্বর চৌধুরীর মৃত্যুর পর একের পর এক রহস্যময় আগন্তক এর আগমন ঘটতে থাকে এই কুঠিবাড়িতে। সবার কাছেই নাকি রাজেশ্বর চৌধুরীর চিঠি আছে। যে রাজেশ্বর চৌধুরী জীবনে কখনও বিয়েই করেননি তার ছেলে আর ছেলের বউ পর্যন্ত হাজীর হয় সম্পত্তির লোভে।

কি? রহস্যটা জমে উঠেছে না? আরে দাঁড়ান। আরও আছে। এরমধ্যে আরও একজন খুন হয় সবাই উপস্থিত থাকা কালেই। রহস্য আরও জমে উঠে। তবে এইটুকু বোঝা যায় দুটো খুন একই উদ্দেশ্যে একজনই করেছে। মুখোশ পরে আরও একজন আছেন এই কুঠিবাড়িতে। তার চরিত্র কেমন যেন রহস্যময়। কে খুন করল? কেন করল? ওটা মি. সেনকেই বের করতে দিন। আসুন আমরা বইটা নিয়ে আলোচনা করি।

এটা একটা পিওর মার্ডার মিস্ট্রি। এর আগেও আমি বেশ কতগুলো মার্ডার মিস্ট্রি পড়েছি। কিন্তু এরকম মাথা ঘোলানো একটাও ছিলনা। একটার পর একটা চরিত্র ঢুকছিল কুঠিবাড়িতে আর আমার প্রেডিকশনের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছিল। বইয়ের ভারভাগের তিনভাগ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি খুনি কে সেটা প্রেডিক্ট করতে। শেষে হাল ছেড়ে দিয়েছি। এত প্রেশার নেয়া যাচ্ছিল না। তারথেকে বরং ওদের সাথে থাকি, এমনিই খুনি বের হবে খন। বইয়ের গল্পটা হয়তো আহামরি কোনও গল্প না, তবে প্যাঁচটা যে অসাধারণ সেটা স্বিকার করতেই হবে। সম্পত্তির লোভে অনেকেই আপনজনদের খুন করে, এরকম বহু নজির আছে। এসব নিয়ে গল্পও হয়েছে প্রচুর। তবে নীহাররঞ্জন অন্য চিজ। সেই কমন গল্পের মধ্যেই তিনি আনকমন একটা রহস্য নিয়ে খেলেছেন। ইন্সপেক্টির সেন তো বটেই আমাকেও ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। বাপ রে!

বইয়ের প্রচ্ছদটাও আমার খুব ভালো লেগেছে। একদম পার্ফেক্ট একটা প্রচ্ছদ। বইয়ের বাধাইও ভালো। বাধাই এবং কাগজের তুলনায় দাম কমই বলা যায়।

না পড়ে থাকলে পরে নিতে পারেন বইটি। খারাপ লাগবে না মনে হয়!

লেখা: মাসুম আহমেদ আদি

নবীন- প্রবীন লেখীয়োদের প্রতি আহ্বান: সাহিত্য সুহৃদ মানুষের কাছে ছড়া, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, রম্য রচনা সহ সাহিত্য নির্ভর আপনার যেকোন লেখা পৌঁছে দিতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন [email protected]
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড