অধিকার ডেস্ক ০১ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:২৫
বেড়াতে তিনি খুব একটা পছন্দ করেন না। কিন্তু কিছু জায়গায় তাঁর যেতে হয়েছিলো অনেকটা বাধ্য হয়েই। এই যেমন, ঠাকুরের কাজে বাংলা বিহার, নিজেদের গা গঞ্জ, এমনকি সুন্দরবনের দূর্গম অঞ্চল। আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে ঘুরেছেন গোটা ভারত আর আমেরিকা। সে সবের বর্ণনাই এই বইয়ে। বলছিলাম শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর কথা। খুব শখ করে নয়, অনেকটা চাপে পড়েই লিখেছিলেন এই ভ্রমণ কাহিনী।
যাই হোক, বইয়ে মোট ছয়টি অংশে লেখক তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিখেছেন। সেগুলো হলো,
১.রামায়ণের সেই বনবাসের পথে ২.প্রয়াগ মহাকুম্ভ ৩.গঙ্গাদ্বীপে অষ্টপ্রহর কীর্তন ৪.সাধুদের খাওয়া দেখে তাক লাগে ৫.সাধুর কাতার গৃহী কম ৬. বাঙালের আমেরিকা দর্শন।
রামচন্দ্র বনবাসে গিয়েছিলেন কোন পথে? বাল্মীকির রামায়ণে তার একটা মোটামুটি ভৌগোলিক বর্ণনা পাওয়া যায়। কিছু কিছু বসতি ও নগরের নাম আছে, যার সঙ্গে একালের প্রত্নতাত্ত্বিকেরা বর্তমানে কিছু কিছু স্থান ও নামের সঙ্গে মিল খু্ঁজে পান। আবার ঠিক তিনি এই পথেই গিয়েছিলেন কিনা এটা নিয়ে বেশ দ্বিমত আছে।আর রামায়ণে বর্ণিত পথের সন্ধানে, লেখকও সে পথে যাত্রা করেছিলেন। যাত্রাকালের সে সব বর্ণনা লেখক, "রামায়ণের সেই বনবাসের পথে" লিখেছেন।
"একানুরক্তি, তীব্রতা ও ক্রমাগতিতেই জীবনের সৌন্দর্য ও সার্থকতা।"-শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।
প্রতিটি মানুষই তার নিজের গুণকর্মের ভিতর দিয়ে সৌন্দর্য ও সার্থকতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।জীবন সম্পর্কে যারা সচেতন তারাই একমাত্র তার সৌন্দর্য আর সার্থকতার সন্ধান করে। তবুও আড়াল থেকে, একটা ধীর অন্বেষণ থেকেই যায়। এর আরেক নাম আধ্যাত্মিকতা। আত্মাকে অধিকার করে যা থাকে, তার স্বরূপ উদঘাটন। আর সেই অধিকার করে থাকা গুলো অনুধাবন করে একের পর এক বাস্তবতার ভিতর দিয়ে জানা এবং সার্থক হওয়ার যে ঝোঁক তাকেই আধ্যাত্মিকতা বলে। মোট কথা-যে ভাব ও কর্ম, মানুষকে করণমুখী করে দেয় তাই আধ্যাত্মিকতা। আর সে অন্বেষণে মানুষ গৃহী থেকে সাধুতে পরিণত হয়।
কুম্ভমেলা একটি হিন্দু উৎসব। এই উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা তীর্থস্নান করতে আসেন। সাধারণ কুম্ভমেলা প্রতি চার বছর অন্তর আয়োজিত হয়। প্রতি ছয় বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগে (এলাহাবাদ) অর্ধকুম্ভ আয়োজিত হয়।প্রতি বারো বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে পূর্ণকুম্ভ আয়োজিত হয়। বারোটি পূর্ণকুম্ভ অর্থাৎ প্রতি ১৪৪ বছর অন্তর প্রয়াগে আয়োজিত হয় মহাকুম্ভ। হিন্দু তীর্থযাত্রী প্রয়াগে এই মেলায় যোগ দেন। মকর সংক্রান্তির এই প্রয়োগ কুম্ভমেলায় লেখক গিয়েছিলেন। তা সংঘটিত হয়েছিলো এলাহাবাদে।
কুম্ভমেলা চারটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আয়োজিত হয়। এই চারটি স্থান নির্বাচিত হয় বৃহস্পতি ও সূর্যের অবস্থান অনুসারে। বৃহস্পতি ও সূর্য সিংহ রাশিতে অবস্থান করলে নাসিকের ত্র্যম্বকেশ্বরে; সূর্য মেষ রাশিতে অবস্থান করলে হরিদ্বারে; বৃহস্পতি বৃষ রাশিতে এবং সূর্য কুম্ভ রাশিতে অবস্থান করলে প্রয়াগে; এবং সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে অবস্থান করলে উজ্জয়িনীতে মেলা আয়োজিত হয়। সূর্য, চন্দ্র ও বৃহস্পতির রাশিগত অবস্থান অনুযায়ী মেলা আয়োজনের তিথি নির্ধারিত হয়। লেখক যে বার মেলায় গিয়েছিলেন সেবার ছিলো মকরক্রান্তি। মেলা ছিলো এলাহাবাদে। সে মেলায় যাওয়ার কাহিনী বৃত্তান্ত ও মেলার অংশবিশেষ নিয়েই লেখকের পরের চারটি অংশ। গঙ্গাদ্বীপে অষ্টপ্রহর কীর্তন- বিভিন্ন সাধুদের মেলায় আগমন আর তাদের কীর্তন ও বিভিন্ন কার্যবলির বিবরণ। এখানে দেখা মেলে এক বাঙালি সাধুর সাথে, বয়স ত্রিশ। লেখক জানতে চাইলেন, এত কম বয়সে তিনি কেন সাধু হয়েছেন? সাধু উত্তর করেছেন, রাস্তা তো বহুদূর একটু আগে পৌছানোর জন্য তিনি একটু আগেই বের হয়েছেন।
সাধুদের খাওয়া দেখে তাক লেগে যায়- লেখক অবাক হয়ে দেখলেন, সাধুদের ভোজন। যেখানে মেলা হচ্ছে সেটা চাষের জমি। চার দিকে বালুর উড়াউড়ি। তার মধ্যে রান্না হচ্ছে। লেখক এক সাধুর সাথে কথা বলবার পর খেতে বসলেন। বালির চরের ওপর খোলা রোদে বসে খাওয়া। হওয়ায় প্রচুর বালি উড়ে আসছে, তার মধ্য তাদের খাবারের বহর দেখে লেখক হতবাক! মেলায় লেখক লক্ষ করেছেন বিদেশীরাও আছে। তার মধ্যে এক বিদেশী মেয়ের সাথে লেখকের প্রায়ই দেখা হচ্ছে। কিন্তু গৃহী লোক যতই হোক না কেন, সাধুদের বহর ছিলো বিশাল বড়। তারা আসছিলো কাতারে কাতারে। বইয়ের অর্ধেক অংশ এখানেই শেষ। বাকি টা লেখকের আমেরিকা ভ্রমন নিয়ে লেখা।
লেখক যে ভাবে নিজের পরিচয় দিয়েছেন তা থেকে এটাই বিবেচ্য, তাকে ঠিক তার স্বইচ্ছায় আমেরিকা যেতে হয় নি। বহু কথার পর জানা গেলো তিনি সেখানে গিয়েছিলেন মূলত একটা বঙ্গীয় কনফারেন্সে। এটা ছিলো তিনদিনের একটা কনফারেন্স। যেখানে তিনি ৩০ মিনিট বক্তৃতা দিবেন। সেখানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন সমরেশ বসু। কিন্তু হঠাৎ মারা যাওয়ায় লেখক কে নির্বাচন করা হলো। যাওয়া ও থাকা ব্যবস্থা করে দিবে। অফার টা ছিলো আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে। যাই হোক লেখক সেখানে গিয়েছিলেন এবং এই কনফারেন্স কে কেন্দ্র করে বিদেশী বাঙালীদের সে কি আগ্রহ! তাছাড়া সেখানকার আরো অনেক বাঙালিদের সাথে তাঁর ঘটনাবলি স্থান পেয়েছে।
লেখকদের ভ্রমণ কাহিনী পড়া মানে, প্রিয় লেখকদের সাথে বিনাখরচে বিভিন্ন দেশ ঘুরে আসা। সঙ্গী হিসেবে লেখক তো আছেনেই। আর কি চাই। ভ্রমণ কাহিনী পড়ার পর আমার মনে হয়, লেখক যেমন সব কিছু শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি পৌছালেন, আমিও বোধহয় তেমনি সব শেষ করে ক্লান্ত হয়ে ফিরলাম।
আরেকটা ব্যপার হলো, অন্য কোন বই গল্প বা উপন্যাস পড়ার সময়, মন পরে থাকে কখন শেষ হবে এটা। শেষ হলে তবেই একটা স্বস্তি পাই। কিন্তু ভ্রমনকাহিনী শেষ হলে আমি হাতশ হই। মন খারাপ হয়। শেষ হয়ে গেলো আমার ঘোরা ফেরা। এই বইয়ের বেলায়ও এমনি হয়েছে। বাঙালের আমেরিকা দর্শনে, আমি মুগ্ধ হয়েছি। আবার কিছু জিনিসে খুব বিরক্ত হয়েছি। সুপ্রিয় ভারতীদের আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
আমিও লেখকের মতো অবাক হয়েছি, ভারতী এই আমেরিকায় থেকেও ডুরেপাড় শাড়ি পড়ে! উঠোনে কোণে লাউ, বেগুন, লংকা ফলায়! জয়ন্তী নামে বাঙালি মেয়েটার জন্য খারাপ লেগেছে। একটা পরিবারের দেখা পেয়েছিলাম যার সবগুলো মানুষ খারাপ! আসলে কি এমন হয়! কুম্ভমেলায় সাধুদের বিবরণ আর কাজবাজ দেখে আমি তো বাকশুন্য! তবে এটা সত্যি ভ্রমণটা বেশ উপভোগ্য ছিলো।
লেখা: জামি জাহান
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড