• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মায়ায় ঘেরা ‘মহামায়া’ ও ‘চন্দ্রনাথ পাহাড়’

  ফাহিম মোনায়েম

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:০৭
চন্দ্রনাথ পাহাড়
ছবিঃ লেখকের নিজস্ব তোলা

চার বন্ধু মিলে রাত এগারোটার বাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে আমি , লালন উঠলাম কল্যাণপুর থেকে, নাজমুল উঠলো কমলাপুর আর এনামুল উঠলো সনির আখড়া থেকে মিলিত হলাম রাত সাড়ে ১২ টায় বাসে। আজাদ ভাইকে বলেছিলাম লোকটা আসলেন না, পরে জানালাম সময় বের করতে পারেনি। যাই হোক অপেক্ষায় থাকলাম পিআইবির সবাইকে নিয়ে কোথায়ও আবার যাওয়া হবে। তবে আজাদ ভাইকে সঙ্গে পাবো কি-না সন্দেহ… কেননা লোকটা একটু কেমন যেন শুধু বলে সময় নেই…।

লেখক মাঝখানে

পরিকল্পনা করে নিলাম এক দিনে কায়েকটা দর্শনীয় স্থান দেখবো তার মধ্যে আগে সকাল সকাল চন্দ্রনাথ পাহাড়ে মন্দির দেখেতে যাবো। ফজরের আজানের সময় নামিয়ে দিলো সীতাকুণ্ড বাস স্টেশনে নেমে নাজমুল আর লালন বাগড়া দিলো থাকার হোটেল লাগবে বিশ্রাম নেয়ার জন্য আমি আর এনামুলের ইচ্ছা ছিলো না রুম নেয়ার চেয়ে ছিলাম নেমেই চলে যাবো সকালে মেঘাচ্ছন্ন পাহাড় দেখা যাবে সূর্য ওঠার আগে।

রাজি হয়ে রুম নিতে গিয়ে দেখি তেমন কোন থাকার ভালো হোটেল নেই যা আছে তাও খালি নাই। পরে একটা রুম পেলাম ৫ তলায় সেখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে সকালের নাস্তা করে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে ছুটলাম। এনামুল বললো গাড়ীতে নয়, পাহাড়ে যাবো এই আনন্দে হাটতে শুরু করলাম চার বন্ধু। কিছু দুর যাওয়ার পর পথ শেষ হয় না। লোকের কাছে জিজ্ঞেস করে জানা গেলো চন্দ্রনাথ মন্দিরে অটোতে যাওয়া যায় পথ দুই কিলোমিটারের বেশি। কি করার মাঝ পথে কোন গাড়ী পাওয়া যাচ্ছিলনা তাই বাধ্য হয়েই পাশে মন্দির দেখতে দেখতে পায়ে হেটেই গন্তব্যে। পাহাড়ে ওঠার আগেই সবাই ক্লান্ত।

একটু বিশ্রাম কলা, পানি, চা বিরতি। কিছুক্ষণ পরে আবার ১৮০০ ফিট পাহাড়ে ওঠার প্রস্তুতি। সঙ্গে নিতে হবে বাসের লাঠি, নিতে হবে খাবার পানি। বাঁস নিলাম ২০ টাকা করে, জমা দিলে ১০ টাকা ফেরত দিবে এমন বিজ্ঞাপনে। এবার গন্তব্যে যাত্রা শুরু পাহাড় দেখা সাথে চন্দ্রনাথ মন্দিরে যাওয়া। সীতাকুণ্ড অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার।

পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। এর পুরনো নাম ছিল "সীতার কুণ্ড মন্দির"। রাজমালা অনুসারে প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে গৌরের বিখ্যাত আদিসুরের বংশধর রাজা বিশ্বম্ভর সমুদ্রপথে চন্দ্রনাথ মন্দিরে পৌঁছার চেষ্টা করেন। ত্রিপুরার শাসক ধন মাণিক্য এ মন্দির থেকে শিবের মূর্তি তার রাজ্যে সরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হন। প্রতিদিন এখানে আরাধনা করতে আসে শত শত সনাতন ধর্মাবলম্বী। পাহাড়ে ওঠার সময় দেখা হয় বেশকিছু পর্যটকদের সাথে অনেকেই ঢাকা থেকে গেছে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের মাঝামাঝি দূরত্বে এবং চুড়ায় ছোট ছোট টং দোকানে হালকা খাবার এবং পূজা দেয়ার উপকরণ পাওয়া যায়।

তবে ভালো হয় উঠার সময় সাথে করে নিয়ে যাওয়া কিন্তু আমরা সেটা করিনি টানার ভয়ে। সিড়ি বেয়ে কিছুদুর যাওয়ার পরেই আমাদের এক বন্ধু এনামুল বললো আর পারছিনা পানি খেতে হবে। এমন জায়গায় বাগড়া দিলো যে কোন সেখানে কোন দোকান নেই। একটু হেটে পেলাম একটি দোকান সেটিও বন্ধ।

কিছুদূর এগোলে একটা ঝর্না চোখে পড়ল। সেখানে ফ্রেশ হয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম। আঁকাবাঁকা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চোখে পড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। এই স্থানে রয়েছে পেয়ারা, আম ও পানবাগান। কিছু দুর গিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সাথে সেলফি চলতে থাকে।

এমন সময় দেখি ষাটোর্ধ এক ব্যক্তি টুপি মাথায় লম্বা জামা, তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কিভাবে উঠলেন কষ্ট হয়নি। বললেন খুব সকালে মেঘের খেলা দেখতে তিনি ভারতের আগরতলা থেকে এসেছেন। কষ্ট হয়েছে, প্রকৃতি দেখার স্বাধ কষ্টকে ম্লান করে দেয়। তার কথায় আমরা আরও শক্তি পেলাম। তার সাথে একটি সেলফি তুলে নিলাম। যতোই ওপরে উঠছি চারপাশের ভিউ ততোই সুন্দর হতে লাগলো। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে একসময় পৌঁছে গেলাম পাহাড়ের চূড়ায়।

যতদূর চোখ যায় ততোদূর পর্যন্ত শুধুই সবুজের রাজ্য।দিগন্তরেখা বরাবর ধোঁয়াশার মতো সমুদ্রও ধরা দিলো চোখে। মনে পড়ে গেল ছোটবেলায় দেখা ‘আলিফ লায়লার’ সেই ঘটনা, যেখানে এমন ধোঁয়াশার মধ্য দিয়ে অন্য এক জগতে চলে যায় সবাই।

কিছুক্ষণ চলল ফটোসেশন পর্ব। মন্দির ঘুরে দেখা মন্দিরের পাশে রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। এরেকটা মজার বিষয় হলো পাহাড়ের চুড়ায় বিদ্যুত এবং পানির ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে যারা থাকেন তাদের জন্য। আমরা যখন পৌছালাম তখন অনেক রোদ, তাই খুব সকালে মন্দিরে গেলে কষ্ট কম হয়।

এবার নামার পালা…। নামার পথে দেখা হলো কিছু মাদ্রাসার ছাত্র তাদেরকে সহজ পথ দেখিয়ে দিলাম যাতে উঠতে কষ্ট কম হয়। কিছুদুর নামার পরে এক হিন্দু পরিবারের সাথে দেখা তারা বিশ্রাম নিচ্ছে উপরে উঠবে। সাথে বাচ্চা সহ বয়স্ক মহিলা রয়েছে। কিছু দুর নামার পর পেয়ারা বাগান দেখলাম সাথে দোকান পাহাড়ি কলা খাওয়া পর্ব। আমি গাছ থেকে পেয়ারা পাড়ার আগ্রহ সামলাতে পারলাম না, পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠে পড়লাম গাছে ১০টি পেয়ারা নিয়ে এলাম। কাজটি ঠিক হয়নি তারপরেও এটাই আনন্দ। আসার সময় বলে আসছি গাছ থেকে পেয়ারা খেয়েছি কিন্তু। উঠার সময় যতটা কষ্ট হয়েছে নামার সময় ততটা হয়নি।

নিচে নেমে আরও দুটো দর্শনীয় স্থানে গেলাম গুলিয়াখালী সি বিচ ও মহামায়া লেক। ফেরার পথে মনে হচ্ছিল আরেকটু থেকে যেতে পারলে চারপাশটা আরও ভালোভাবে দেখে যেতে পারতাম। তবে সান্ত্বনা এই ভেবে যে, কেবল একদিনের ছুটিতেই খুব সহজে চন্দ্রনাথ-গুলিয়াখালী মহামায়া লেক থেকে ঘুরে-আসতে পেরেছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড