অধিকার ডেস্ক ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ২১:৪৫
সাম্রাজ্যবাদের এই দুনিয়াতে ব্যবসাই মূল কথা, অস্ত্রবাণিজ্যকে চাঙ্গা রাখতে দুনিয়াব্যাপী নিরপরাধ মানুষ নিহত হচ্ছে রোজ। মায়াকান্না আর নামমাত্র চাপ প্রয়োগ করে অস্ত্রবাণিজ্যের মুনাফার কিয়দাংশ দিয়ে মানবাধিকার সংগঠনকে দিয়ে পরাশক্তিরা সব জায়েজ করে ফেলে।
সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের সমালোচক, তারা রাষ্ট্র পরিচালনাকে সুষ্ঠু রাখতে সরকারের সমালোচনা করে, জামাল খাসোগিও তেমনটি করতে গিয়ে ফেঁসে যান, বহু সাংবাদিকের মতো তিনিও এখন নিখোঁজ। রাষ্ট্রপ্রধানরা যা করবেন তাই ন্যায়, বিশ্বের পরাশক্তিরা তাকেই সাপোর্ট করবে যাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীক ফায়দা আছে। অস্ত্রবাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে তাই আমেরিকাও খাসোগি কাণ্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের পাল্লায় যাবে নাকি ন্যায়বিচারের- সেটাই এখন দেখার বিষয়।
চলতি বছর অক্টোবর মাসের ২ তারিখে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে বিখ্যাত সৌদি সাংবাদিক ও সমালোচক জামাল খাসোগির অন্তর্ধানের ঘটনায় রিয়াদ-আঙ্কারার যৌথ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। বৈশ্বিক চাপ আর ধিক্কার যখন সৌদিকে একেবারে চেপে ধরেছে তখন স্বয়ং যুবরাজ সালমান এই মামলার স্বতন্ত্র তদন্ত করার আদেশ দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষকে। ‘রয়টার্স’
গত সপ্তাহে যৌথ তদন্ত কমিটির কাজ শুরুর কথা থাকলেও স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরের পরে তদন্তকারীরা কনস্যুলেটের ভেতরে তল্লাশি করবে ও খাসোগির বাস্তবে কি হয়েছিল তা অনুসন্ধান করার জন্যে ভেতরে প্রবেশ করবে বলে দূতাবাসের এক সূত্র বার্তা সংস্থা ‘রয়টার্স’কে জানায়।
পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে এক সৌদি কর্মকর্তা জানায়, ‘ পাবলিক প্রসিকিউটরকে খাসোগি মামলায় যৌথ কমিটির উঠে আশা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন বাদশাহ’। কবে নাগাদ এই কমিটি কাজ শুরু করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অতিদ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে’।
সৌদি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক খাসোগি বিবাহবিচ্ছেদের কাগজপত্র নিতে ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেটে প্রবেশ করলে আর বের হয়নি। তাকে ভেতরে হত্যা করে, টুকরো টুকরো করে দেহ সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তুর্কি কর্তৃপক্ষ। যদিও সৌদি প্রশাসন আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
খাসোগি ঘটনায় সৌদি আরব ভয়াবহ চাপে পড়েছে। খাসোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরে যদি হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে ‘চরম শাস্তি’ পেতে হবে বলে হুমকি দেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দেশটির ইউরোপিয় মিত্ররা একটি ‘নির্ভরযোগ্য তদন্ত’ করে দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানায়।
সৌদি আরব এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, সৌদির ওপর যে কোনো ধরনের চাপ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে এর চরম মূল্য দিতে হবে। প্রধান পশ্চিমা বাহিনীর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক তেল মহাশক্তিধর জোটের মধ্যে চরম প্রতিশোধ নিতে ‘গুরুতর জবাব’ দিতে প্রস্তুত।
খাসোগির অন্তর্ধান ঘটনায় তদন্ত করতে একটি যৌথ কর্মী গ্রুপ গঠন করার জন্য গত সপ্তাহে তুরস্ক ও সৌদিতে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তদন্তের ঘটনায় গঠিত যৌথ বাহিনী নিয়ে দুই দেশের গুরুত্ব নিয়ে রবিবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় টেলিফোনে যুবরাজ সালমান ও তুর্কি রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এর মধ্যে কথোপকথন হয়।
আগামী ২৩-২৫ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠিতব্য যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সৌদি সংস্কারের স্বপ্নের ‘ডাভোস ইন দা ডেজার্ট’ বৃহত্তম বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অংশগ্রহণকারীরা তাদের অংশগ্রহণ বাতিল করছে। খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় যুবরাজের স্বপ্নের সম্মেলনকে বাজেভাবে প্রভাবিত করছে।
দোসরা অক্টোবর খাসোগি নিখোঁজের কয়েকঘণ্টা আগে তুরস্কের বিমানবন্দরে ১৫ সদস্যের একটি সৌদি হিট স্কোয়াড কূটনৈতিক পাসপোর্টে তুরস্কে আসার প্রমাণ পেয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করে তুর্কি সরকারের একটি দৈনিক পত্রিকা।
সন্দেহভাজন দলের মধ্যে একজনের লিঙ্কডইন প্রোফাইল থেকে জানা যায়, সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২০ বছর ধরে কাজ করা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। সৌদির অতীত গণমাধ্যম প্রতিবেদন ও ফেসবুক প্রোফাইলে সৌদি সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনির সদস্যদের ছবির সঙ্গে সন্দেহভাজনদের ছবি মিলে যায়। এই সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে সৌদি কনস্যুলেট ‘রয়টার্স’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
‘দা ওয়াশিংটন পোস্ট’ অজ্ঞাতনামা তুর্কি ও মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেখানে জানায়, খাসোগিকে কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যার অডিও,ভিডিও প্রমাণ তুরস্কের কাছে রয়েছে বলে মার্কিন কর্মকর্তাদের অবহিত করে। মার্কিন কর্মকর্তারা অডিও শুনেছে বা ভিডিও দেখেছে কি না সে সম্পর্কে অবগত না হলেও তুর্কি কর্তৃপক্ষ যে এসব প্রমাণ ওয়াশিংটনকে দিয়েছে তা নিশ্চিত করেছে।
ট্রাম্প-সালমান হুমকি-পাল্টা হুমকি
শনিবার (১৩ অক্টোবর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানায়, খাসোগিকে যদি ইস্তাম্বুলের নিজ কনস্যুলেটে সৌদি হত্যার প্রমাণ হয় তাহলে, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি সামরিক বাহিনীর কাছে সামরিক অস্ত্র বিক্রি করা স্থগিত করে ‘নিজেদেরকেই শাস্তি’ দিবে।
সৌদি আরব ও বাদশাহ সালমানের সাথে ট্রাম্পের সখ্যতার কারণে খাসোগির ঘটনায় নিয়ে বৈশ্বিক চাপের প্রভাব ট্রাম্পের ওপর ও পড়েছে। মার্কিন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপের দাবি তোলেন।
সৌদিজোট পরিচালিত হামলায় ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধে নাকাল হাজার হাজার শিশু ও বেসামরিক হত্যার অভিযোগে রিয়াদের ওপর। মার্কিন আইন প্রণেতারা দাবি করেন, খাসোগি হত্যায় সৌদি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা থাকলে অতিদ্রুত সৌদির সঙ্গে চুক্তি প্রত্যাহার করতে হবে।
ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আসলেই মনে করি আমরা যদি তা করি তবে আমরা নিজেদেরকে শাস্তি দিব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সৌদিতে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে।’
আসলে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে তা না বলে তিনি আরও বলেন, ‘আরও অনেক কিছু আছে যা আমরা করতে পারি এবং তা খুব, খুব শক্তিশালী, খুবই শক্তিশালী, আমরা তা করব।’
মার্কিন আইন অনুযায়ী সামরিক অস্ত্র বিক্রয় বন্ধের অধিকার কংগ্রেসের রয়েছে। একটি অনানুষ্ঠানিক পর্যালোচনায় জানা যায়, বিক্রীত সমরাস্ত্র দিয়ে যদি বেসামরিক হত্যা করার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে ‘হোল্ডিং’ প্রক্রিয়া অনুযায়ী কোনো দেশের সঙ্গে সামরিক অস্ত্র বিক্রয় চুক্তি স্থগিত করা যাবে।
লকহেড মার্টিন কর্প (এলএমটিএন) এবং রেইথিয়ন কো (আরটিএনএন) সহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদার, ওয়াশিংটন-রিয়াদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুবিধাভোগী কর্পোরেশন। অস্ত্র চুক্তি বন্ধ করার কারণে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার (১৩ অক্টোবর) জানায়, ‘যদি তারা এটা (অস্ত্র) আমাদের কাছ থেকে না নেয় তাহলে তারা রাশিয়া ও চীনের কাছে চলে যাবে। “একবার ভাবুন ১১০ বিলিয়ন ডলার!” তারা এই বিপুল অর্থ অন্য দেশকে দিতে যাচ্ছে, এবং আমি মনে করি এটা খুবই বোকামি একটা কাজ হবে’।
সাংবাদিক খাসোগি হত্যায় এখন ট্রাম্প কী করতে যাচ্ছে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী জোট, বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ট্রাম্প কি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এ দিকে, ৫ নভেম্বর ট্রাম্প ইরানের তেল রপ্তানির ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে এবং ক্ষতি এড়াতে সৌদি আরবকে তেল উত্তোলন বৃদ্ধির তাফিদ দিয়ে রেখেছে।
ট্রাম্প জানায়, সপ্তাহান্তে সৌদি বাদশাহের সঙ্গে নিজে থেকে কথা বলবেন। সম্ভবত তিনি সপ্তাহান্তে সৌদি আরবের কিং সালমানের সাথে কথা বলবেন। কারণ আমার মনে হয় কি ঘটছে তা তাকে জিজ্ঞাসা করা আমার পক্ষে উপযুক্ত।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড