• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এ. পি. জে. আবদুল কালাম : মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া

  অধিকার ডেস্ক    ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১০:০৯

এ. পি. জে. আবদুল কালাম
এ. পি. জে. আবদুল কালাম (ছবি: সংগৃহীত)

আবুল পাকির জয়িনুল-আবেদিন আব্দুল কালাম ছিলেন ভারতের ১১ তম রাষ্ট্রপতি। পেশাগত দিক থেকে কালাম বিজ্ঞানী ছিলেন এবং দেশ গড়ার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি 'ইসরো', 'ডিআরডিও'-তে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। পরে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হন।

জন্ম, শিক্ষা ও কর্মজীবন

১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর তামিলনাড়ুর রাজ্যের রামেশ্বরমে জন্মগ্রহণ করেন ডঃ এ. পি. জে. আব্দুল কালাম।

রামেশ্বরমে কালামের পিতা আবুল ফকির জয়নাল আবেদিন ডিঙি তৈরি করতেন। তামিল মুসলিম এই পরিবারে ছোটবেলা থেকেই চরম দরিদ্রতার মধ্যে বড় হয়ে ওঠেন কালাম। ছোটবেলায় পড়াশোনার খরচ জোগাতে খবরের কাগজও বিক্রি করেছেন তিনি।

নিজের আত্মজীবনীর এক জায়গায় কালাম বলেছেন, "আমি তখন ৮ বছরের ছিলাম। তবে তখনই পরিবারের জন্য উপার্জন করব বলে ভেবেছিলাম।" সে সময়ে খবরের কাগজ বিলি করে কালাম পরিবারের আয়কে কিছুটা বাড়ানোর চেষ্টা করতেন।

মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া

মধ্যম মানের ছাত্র না হলেও ছোট বয়সে পড়াশোনায় খুব বেশি নম্বর পাননি কালাম। তবে তার ধৈর্য, অধ্যাবসায় ও কোনও জিনিসকে জানার ইচ্ছে তাকে পাল্টে দেয়।

অঙ্ক কষতে দারুণ ভালোবাসতেন কালাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে একের পর এক অঙ্ক কষে যেতেন। এই কাজে তার কোনও ক্লান্তি ছিল না।

এ. পি. জে. আবদুল কালাম পদার্থবিদ্যা বিষয়ে সেন্ট জোসেফ'স কলেজ থেকে এবং বিমান প্রযুক্তিবিদ্যা (অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিষয় নিয়ে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এম আই টি) থেকে পড়াশোনা করেছিলেন।

এরপর চল্লিশ বছর তিনি প্রধানত রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন (ডিআরডিও) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন।

ভারতের অসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিক সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে তিনি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিলেন। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশযানবাহী রকেট উন্নয়নের কাজে তার অবদানের জন্য তাকে ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়।

কেরিয়ারের একেবারে প্রথমদিকেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য একটি ছোট হেলিকপ্টার ডিজাইন করেন কালাম।

১৯৬৫ সালে তিনি ডিআরডিও-তে একটি রকেট প্রোজেক্টে কাজ শুরু করেন কালাম। ১৯৬৯ সালে তিনি ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার 'স্যাটেলাইট প্রোজেক্ট ডিরেক্টর' পদে আসীন হন। তার নেতৃত্বেই ১৯৮০ সালে ভারত প্রথম স্যাটেলাইট 'রোহিনী' মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে।

১৯৯৮ সালে পোখরান-২ পরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি প্রধান সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। এটি ছিল ১৯৭৪ সালে স্মাইলিং বুদ্ধ নামে পরিচিত প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর দ্বিতীয় পরমাণু বোমা পরীক্ষা।

২০০২ সালে কালাম তৎকালীন শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর এই পদে আসীন থাকার পর তিনি শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবকের সাধারণ জীবন বেছে নেন। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্নসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছিলেন কালাম।

অবিবাহিত কালামই একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি এই পদে আসীন হয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকেন। ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ (১৯৫৪) ও জাকির হুসেন (১৯৬৩)-এর পর তৃতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে ভারতরত্ন সম্মান পান কালাম।

কালাম রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ২১ টি প্রাণভিক্ষার আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ২০ টিতেই কোনও জবাব দেননি কালামের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রপতি ভবন। যা নিয়ে কিছুটা সমালোচনা হজম করতে হয় তাকে। তার মধ্যে ২০০১ সালের পার্লামেন্টে হামলার মূল চক্রান্তকারী আফজল গুরুর নামও ছিল।

মৃত্যু

২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জুলাই, সোমবার, মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট নামক প্রতিষ্ঠানে বসবাসযোগ্য পৃথিবী বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিট নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাকে বেথানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সন্ধ্যা ভারতীয় সময় ৭:৪৫ ,মিনিট নাগাদ তার মৃত্যু ঘটে।

কালামের মৃতদেহ ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে শিলং থেকে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে একটি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানে নতুন দিল্লির পালাম বিমান ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তিন বাহিনীর প্রধান কালামের মরদেহে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এরপর জাতীয় পতাকায় ঢেকে কালামের দেহ ১০, রাজাজি মার্গে তার দিল্লির বাসস্থানে নিয়ে যাওয়া হলে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবসহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিরা শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

ভারত সরকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কালামের মৃত্যুতে তার সম্মানে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বক্তব্যে বলেন যে, কালামের মৃত্যু দেশের বিজ্ঞান জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি, কারণ তিনি ভারতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ও পথ দেখিয়েছিলেন। চতুর্দশ দলাই লামা কালামের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন ও প্রার্থনা করে বলেন যে, কালাম শুধুমাত্র একজন বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাবিদ বা রাষ্ট্রনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন নিপাট ভদ্রলোক, সরল ও বিনয়ী।

ভূটান সরকার দেশের পতাকা অর্ধনমিত রাখার ও ১০০০টি বাতি প্রজ্জ্বলনের নির্দেশ দেয় এবং ভূটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে কালামকে ভারতীয় জনগণের রাষ্ট্রপতি বলে উল্লেখ করে গভীর শোক প্রকাশ করেন।

ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সুসিলো বমবাং ইয়ুধোয়োনো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লী সিয়েন লুং কালামের প্রতি সম্মান জানান।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া এবং বেঙ্গলই ওয়ান ইন্ডিয়া

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড