অধিকার ডেস্ক ১২ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৩৫
তুর্কি তদন্তকারীরা ভিডিও এবং অডিও রেকর্ডিং এর ওপর ভিত্তি করে দাবি করেছে যে, জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছিল। সৌদি কর্তৃপক্ষের এতদিন ধরে খাসোগি হত্যার বিষয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতাহীনতার কথা দাবি করে আসলেও, এই প্রমাণ রিয়াদের ওপর আঙ্কারার চাপ প্রয়োগের লক্ষণ হিসেবেই দেখা যাচ্ছে। ‘দা গার্ডিয়ান’
সৌদি আরবের ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে যে সৌদি সরকার হত্যা করেছে তাদের কাছে সেটির প্রমাণ রয়েছে। মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) রাতে এক প্রতিবেদনে জানায়, বিবাহ বিচ্ছদের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গেলে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করলে সৌদি আরবের একটি নিরাপত্তা দল কীভাবে তাকে নির্যাতন করেছে এবং হত্যার পর কীভাবে টুকরো টুকরো করেছে তা ওই ভিডিওতে রয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, তুরস্কের কর্মকর্তারা তাদের কাছে থাকা খাসোগি হত্যার ভিডিও এবং অডিও ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছে। ওই হত্যার সঙ্গে যে সৌদি সরকার জড়িত সেটি প্রমাণ করতেই এমনটা করেছে তুরস্ক। ওই ভিডিওর বিষয়বস্তু সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসন অবহিত রয়েছে।
‘আপনি তার কণ্ঠ শুনতে পাবেন এবং কয়েক ব্যক্তির আরবিতে কিছু বলছে সেটিও শুনতে পাবেন। আপনি শুনতে পাবেন কীভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছে, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’কে বলেন ভিডিও রেকর্ডিং এর দায়িত্বে থাকা এক ব্যাক্তি। পত্রিকার ওই সূত্র বলছে, কনস্যুলেট ভবনের ভেতর থেকে রেকর্ড করা ভয়েস বলে দিচ্ছে যে, জামাল খাশোগি ভবনের ভেতরে ঢোকার পর কী হয়েছিল। দ্বিতীয় আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, এ রেকর্ডিংয়ে খাসোগিকে মারধরের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
এদিকে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন সৌদি সরকার সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক চাপের মধ্যে পড়েছে। যুবরাজ নিজেকে প্রগতিশীল সংস্কারক দাবি করলেও তার সমালোচনাকারীদের গুম ও হত্যার বিষয়টি এখন অনেকটা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে বিদেশি নেতাদের সঙ্গে বিন সালমানের সম্পর্ক প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সৌদি যুবরাজের স্বপ্নের প্রকল্প ‘ভিশিন ২০৩০’ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে রিয়াদে ‘ডাভোস ইন দা ডিজার্ট’ শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবার কথা অক্টোবর ২৩ থেকে অক্টোবর ২৫ পর্যন্ত। দেশটির তেলের ওপর নিরাপত্তা হ্রাস করতে এই সম্মেলনকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে বিশেষজ্ঞরা, এই সম্মেলনকে ঘিরে সৌদি সরকার বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ী,বিনিয়োগকারীসহ নানা ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের দাওয়াত দিয়েছে।
এই সম্মেলন প্রচার করতে বিশ্বের সব গণমাধ্যম থেকে রিয়াদে প্রতিবেদক জড়ো হবার কথা থাকলেও, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পরে শুক্রবার অনেক গণমাধ্যম এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা বয়কট করে। মার্কিন সংবাদ সংস্থা ‘সিএনএন’, ‘সিএসবিসি’ ও ‘ফিনান্সিয়াল টাইমস’ সম্মেলন বয়কট করার ঘোষণা দেয়। ‘সিএনএন’
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ‘সিএনএন’ জানিয়েছে, সম্মেলনটিতে তারা ‘অংশগ্রহণকে প্রত্যাহার করেছে’। ‘সিএনবিসি’ টুইটারে বলেছে, সাংবাদিক নিখোঁজের বিষয়ে ‘চলমান প্রশ্ন’ এর কারণে তারা সরে দাঁড়াচ্ছে।
‘ফিনান্সিয়াল টাইমসে’র প্রধান যোগাযোগ ও বিপণন কর্মকর্তা ফিনোলা ম্যাকডনেল টুইটারে বলেন, খাসোগির অন্তর্ধানের রহস্য সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্র সৌদির সম্মেলনে যোগদান করবে না।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’ এর একজন কলামিস্ট এবং ‘সিএনবিসি’এর সঞ্চালক, লেখক অ্যান্ড্রু রস সর্কিন বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) টুইট করেছেন যে, খাসোগি নিখোঁজের ব্যাপারে ‘ভয়াবহ চিন্তাগ্রস্থ’, সৌদির পরবর্তী সম্মেলনে অংশগ্রহণ বাতিল করা হলো। তিনটি প্রোগ্রাম অপেক্ষাধীন ছিল।
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এর প্রধান সম্পাদক জ্যানি মিন্টন বিদৌস এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন না বলে জানান। ‘লস এঞ্জেলস টাইমসে’র মালিক প্যাট্রিক সুন শিয়ং ও তার বক্তব্য বাতিল করার পরিকল্পনা করেছেন।
সৌদি বিনিয়োগ সম্মেলনে অন্যান্য মিডিয়া অংশীদার যেমন : ‘ব্লুমবার্গ’, ‘ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ক’, ‘নিকেই’ এবং ‘আল আরবিয়া’ অন্তর্ভুক্ত। ‘ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ক’ জানায়, তারা এবং ‘ব্লুমবার্গ’ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সৌদি একটি প্রকাশনার সংস্থার সঙ্গে একটি আরবি ভাষা আর্থিক সংবাদ নেটওয়ার্ক চালানোর জন্য ২০১৭ সালে ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেন ‘ব্লুমবার্গ’।
সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে খাসোগির সম্পর্ক বেশ পুরনো কিন্তু তিনি বর্তমান সরকার বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গেল ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর প্রবেশ করার পর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যায়নি ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ এর এই কন্ট্রিবিউটর সোদি সাংবাদিকের।
তুরস্কের কর্তৃপক্ষদের বিশ্বাস, ভবনটির ভেতরই খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এটি একটি ‘পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলেও বর্ণনা করেছেন তারা। তুরস্কের কর্মকর্তারা ওই অডিও বা ভিডিও প্রকাশ করার ব্যাপারে দ্বিধা দ্বন্দ্বে রয়েছে। কেননা এ ধরনের কিছু প্রকাশ করা হলে তাদের বিরুদ্ধে দেশটিতে থাকা বিদেশি প্রতিষ্ঠান-সংস্থার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ উঠবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড