নাবিলা বুশরা
পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে নোবেল পাওয়ার খাতায় এবার তৃতীয় নারী হিসেবে যুক্ত হলো ডোনা স্ট্রিকল্যান্ডের নাম।
কানাডিয়ান এই বিজ্ঞানী ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড নিজেকে পরিচয় দেন ‘লেজার জক’ হিসেবে।
তরুণদের পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি কীভাবে আগ্রহ বাড়ানো যায় সে বিষয়ে একটি কানাডিয়ান পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের এই প্রফেসর।
ড. স্ট্রিকল্যান্ড তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান পড়ে আর পড়িয়ে। তিনি তাঁর গবেষণা কাজটির নাম দিয়েছেন ‘ফান’।
ড. স্ট্রিকল্যান্ডের সাথে লেজার নিয়ে গবেষণা করে এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে আরও নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন আমেরিকার আর্থর আশকিন এবং ফ্রান্সের জেরার্ড মরু।
ডোনা ১৯৫৯ সালে কানাডার ওন্টারিওতে জন্ম নেন।
১৯৮১ সালে ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথমবারের মত স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ডোনা। এরপর তিনি নিউ ইয়র্ক রোচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. মরুর তত্ত্বাবধায়নে আলোকবিদ্যার ওপর পড়ালেখা করেন।
রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যুগল সম্মিলিতভাবে শব্দ করা কম্পন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া (উচ্চ তীব্রতা উৎপাদনের পদ্ধতি, অতি ক্ষুদ্র অপটিক্যাল কম্পন) আবিষ্কার করেন, যার ফলে চলতি বছরে তাঁরা নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
আবিষ্কারের বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে চোখের লেজার রশ্মি শুদ্ধিকরণ নিয়েও কাজ করা হয়েছিল।
ড. স্ট্রিকল্যান্ড বলেন, ‘এই বিষয়টির পাশাপাশি কোনো কিছুর তীব্রতা খণ্ডন নিয়েও কাজ করার সময়েও তাদের বেশ সতর্ক থাকতে হয়েছিল। হ্যাঁ, এটা অবশ্যই খেলা বদলে দেয়ার মত ব্যাপার।’
তিনি হেসে আরও বলেন, 'ড. মরু জানতেন এবং আমাকে বলতেন- আমি শুধু তাঁর ওপর বিশ্বাস করেছি।'
১৯৯৭ সাল থেকে কানাডার ওন্টারিও’র ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটিতে ডোনা শিক্ষকতা করে আসছেন। এখানে তিনি আল্ট্রাফাস্ট লেজার ল্যাবে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি কাজ করেন।
২০১০ সালের একটি রেকর্ডে তিনি বলেন, ‘দিনের সে সময়টুকু আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের যখন আমি লেজারগুলো নিয়ে খেলা করি। আমি দীর্ঘ সময় নিয়ে এ কাজটি করছি এবং এ কাজে আমি এখনও ঠিক আগের মতই আনন্দ পাই!’
বিজ্ঞান যে মোটেও একঘেয়ে কোনো বিষয় নয়, বরং অনেক বেশি মজার এ বিষয়টি তিনি তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। আর তাই তিনি নিজেকে ‘লেজার গুরু’র চাইতে ‘লেজার জক’ বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
স্নাতক পড়ার সময় লেজার নিয়ে কাজ করতে যখন ডোনা হৃদ কম্পন কমে যাওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখন তিনি এই শব্দটির সাথে পরিচিত হন। অনেকেই তাকে এ নামে ডাকত। তাদের ধারণা ছিল তারা তাদের হাত দিয়েই অনেক ভালো কাজ করতে পারে এবং তারা আমাকে ব্যঙ্গ করে এই নামে ডাকত।
বিশ্বে বর্তমানে নারীরা সব কাজেই বেশ এগিয়ে। কিন্তু বিজ্ঞানে নোবেল অর্জনের জন্য কেন এত বেগ পেতে হয় এটা ভেবে অবাক তিনি।
‘কীভাবে একজন নারীর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেতে এত দীর্ঘ সময় লাগল সেটি ভেবেই আমি বিস্মিত!’ বলেন ড. স্ট্রিকল্যান্ড।
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৬৩ সালে যখন মারিয়া জিওপার্ট মায়ের নোবেল পুরস্কার পেলেন তখন তিনি যে কাজের জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন সেটির জন্য কোনো বেতনও পাচ্ছিলেন না!
আমি নিজেকে সব সময় সমকক্ষ ভাবতাম। আমার পুরুষ সহকর্মীরা যে পরিমাণ বেতন পেতেন আমিও ঠিক তেমনতাই পেতাম। সময় বদলাচ্ছে। আশা করা যায় ভালোর জন্যই বদলাচ্ছে।’
বিজ্ঞানী ডোনার জন্য এই নোবেল পুরস্কারটি অবশ্যই তাঁর কাজের ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি প্রশংসাই বটে।
১৯৯৯ সালে তিনি ‘ওন্টারিও প্রিমিয়ার রিসার্চ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০০০ সালে ‘কটরেল স্কলার্স অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন। এই অ্যাওয়ার্ডগুলো রিসার্চ এবং প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্বে অবদান রাখার জন্য দেওয়া হয়।
২০০৮ সালে, আল্ট্রাফাস্ট লেজার এবং আলোকবিদ্যা নিয়ে কাজ করার জন্য আমেরিকার ‘অপটিক্যাল সোসাইটি’ তাঁর নাম প্রকাশ করে।
লেজার তার সীমানার বাইরে গিয়েও যে পরিমাণ কাজ করতে পারে সে বিষয়টি ড. স্ট্রিকল্যান্ড বেশ উপভোগ করেন।
ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটিতে একটি ভাষণে তিনি বলেন, ‘যাদের হৃদ কম্পন কম, তাদের এনার্জি থাকে অনেক বেশি আর থাকে মানিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড