সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
মৃত্যু স্বাভাবিক। তবে ঘুমের মধ্যেও কোনোকিছু বোঝার আগেই হুট করে কখনো যে মরে যেতে পারেন আপনি, তা কি জানেন? চলুন, আজ জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু কারণকে, যেগুলো কোনো লক্ষণ ছাড়াই আমাদের জীবন কেড়ে নিতে পারে ঘুমের ভেতরেও।
সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট-
এসসিএ বা সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ঘুমের ভেতরে ঘটতে পারে আর ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। এটি মূলত সাইনোয়াট্রায়াল নোডে গিয়ে প্রভাব ফেলে। এতে করে হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছায় না এবং মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সবচাইতে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, এক্ষেত্রে মানুষের শরীরে মৃত্যুর আগে কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না।
কার্বন মনোক্সাইড পয়জন-
কার্বন মোনক্সাইড রঙ গন্ধহীন এক ধরনের গ্যাস, যেটি কিনা গাড়ি, ফায়ারপ্লেস, স্টোভ, গ্রিল ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায়। কার্বন মনোক্সাইড নির্দেশক না থাকলে এই গ্যাস শনাক্ত করাও সম্ভব না। এই গ্যাস যদি কোনোভাবে অনেক বেশি পরিমাণে আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে, তাহলে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, পেট খারাপ ইত্যাদি সামান্য সমস্যা প্রকাশ করে। কিন্তু ফলাফল? একটা সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আর যদি ঘুমন্ত কোনো ব্যক্তির ফুসফুসে এই গ্যাস প্রচুর পরিমাণে প্রবেশ করানো হয়? তাহলে কিছু না বুঝেই ঘুমন্তাবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করবেন সেই মানুষটি।
সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়া-
আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করে, আমরা শ্বাস নিই- এই সবকিছুই মস্তিষ্কের কারণে। এখন ভাবুন, কেমন হতো যদি আমাদের মস্তিষ্ক শ্বাস নেওয়ার ব্যাপারকে নাক বা অন্যান্য অঙ্গকে নির্দেশনা না দিত? স্লিপ অ্যাপনিয়া হয় ঠিক এই কারণটিতেই। ঘুমের মধ্যেই মানুষ নিঃশ্বাস কম নিতে শুরু করে। শরীরে অক্সিজেনের অভাব অনেক বেশি বেড়ে গেলে একটা সময় মারা যায় মানুষ। আর এতে করে ঘুমের যে খুব বেশি সমস্যা হয় সেটাও না! কারণ ঠিক মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে মানুষ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে।
অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া-
সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতোই এই স্লিপ অ্যাপনিয়ায় মানুষ ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। তবে এই দুটো অ্যাপনিয়ার মধ্যে পার্থ্যক্য হলো নিঃশ্বাস নেওয়ায়। সেন্ট্রাল স্লিপ অ্যাপনিয়ায় একটু একটু করে নিঃশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দেয় মানুষ। আর অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার ক্ষেত্রে ঘুমের মধ্যেই কোন একটি অঙ্গ মানুষের নিঃশ্বাস নেওয়ার পথে বাধা দেয়। সেটি হতে পারে জিহ্বা, হতে পারে নাকের মাংশপেশী বা অন্যকিছু। তবে কিছু বোঝার আগেই, এমনকি ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগেই এক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেন আক্রান্ত ব্যক্তি।
দ্য উইডো মেকার হার্ট অ্যাটাক-
নাম শুনেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে, এই অদ্ভুত নামের সমস্যাটি কোনো ব্যক্তির সাথে ঘটলে তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়। মূলত, হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে সবচাইতে ভয়ঙ্কর হার্ট অ্যাটাক হিসেবে বিবেচনা করা হয় দ্য উইডো মেকারকে। এক্ষেত্রে, মানুষের শরীরের বামপাশের প্রধান আর্টারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হৃদপিণ্ড এতে করে মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়ে যায়। রক্তপ্রবাহ চলতে পারে না। ঘুমের মধ্যেই ঘটে বিধায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকু পাওয়া যায় না। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যান খুব দ্রুত।
ড্রাই ড্রোনিং-
পানিতে তো অনেকেই ডুবে মারা যায়। তবে পানির সাথে জড়িত হলেও ড্রাই ড্রোনিং ঠিক পানির ভেতরে ডোবাকে বোঝায় না। এতে করে কোনো মানুষের নাকের মাধ্যমে পানি ফুসফুসে চলে গেলে সেখান থেকে তৈরি হওয়া সমস্যাকে বোঝায়। অনেক সময় ঘুমের মধ্যে কোনো লক্ষণ না দেখিয়েই নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিতে পারে এই সমস্যাটি।
ঘুমোতে গেলেও এখন নিশ্চয় ভয় লাগবে আপনার? তবে হ্যাঁ, মৃত্যু আসতে পারে যে কোনো সময়, যে কোনোভাবে। সেটাকে মেনে নিয়েই নিজেকে সুস্থ রাখুন, ভালো থাকুন।
সূত্র : লিস্টভার্স
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড