সরকার আব্দুল্লাহ তুহিন
অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতায় নোংরা ও নাজুক অবস্থায় পরিণত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন ও হলসমূহের শৌচাগার। প্রায় সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভবনের শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন, নোংরা ও দুর্গন্ধময় থাকে। পানির ট্যাপ আছে তো পানি নেই, আবার কোথাও পানির ট্যাপই নেই। আবার কোনো শৌচাগার সপ্তাহের পর সপ্তাহ পরিষ্কার করা হয় না। মুখ, নাক চেপে যেতে হয় বাথরুমে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু।
কলা ভবন, বিজ্ঞান ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ফ্লোরের বাথরুমগুলোর পলেস্তারা খসে পড়েছে, কমোড-পানি সাপ্লাইয়ে সমস্যা হয়ে আছে, দরজাগুলো ভাঙা-অর্ধভাঙা, ট্যাপ নষ্ট, কোথাও আবার আবর্জনার ভাগাড়। পাবলিক শৌচাগারের মতো প্রতিটি বাথরুমের বেহাল দশা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওয়াশরুমগুলো প্রশাসনের অবহেলার জন্যই এরকম অপরিচ্ছন্ন থাকে। ক্লিনার, সুইপাররা ঠিকমতো পরিষ্কার করলে হয়ত এমন নোংরা পরিবেশ থাকতো না বলে তারা মনে করেন। ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের মৌ ইসরাত বলেন, ওয়াশরুম না, ওইটা ডাস্টবিন। ঝাড়ু দিয়ে সব ময়লা আবর্জনা সুইপাররা বাথরুমের ফ্লোরে জমিয়ে রাখে, বেসিনেও অনেক ময়লা থাকে, হ্যান্ডওয়াশ তো বামুন হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্নের মতো ব্যাপার।
কলা ভবনের সানজিদা ভাবনা বলেন, ‘ওয়াশরুমের অবস্থা খুবই বাজে, নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। দরজা-জানালা ভাঙ্গা, অনেকগুলার ভেতরে ট্যাপও ঠিক নেই, প্রায় সময়ই পানি থাকে না। মেয়েদের একমাত্র হল দোলনচাঁপাতেও একই দুরবস্থার কথা যোগ করেন ভাবনা।’
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের নিলয় মাহমুদ রুবেল বলেন, ‘তথাকথিত এই রুমে কয়েকটা লাইন দিয়ে সারাক্ষণ পানি পড়ে আর মলাশয় পরিণত হয় জলাশয়ে। সবগুলো পানির কল নষ্ট তাই কমোড ব্যবহার করা সম্ভব নয়।’
বিজ্ঞান ভবনের মোহসিনা আক্তার বলেন, ‘ওয়াশরুম না তামাশা! পানি, বদনা কিচ্ছু থাকে না। ফ্ল্যাশগুলোতে খাতা শিট দিয়ে ভরে রেখেছে, পরিস্কারের কোনো নামগন্ধও নেই!’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষকদের ওয়াশরুমই ঠিকমতো ক্লিন করা হয় না, শিক্ষার্থীদেরগুলো সে হিসেবে উপলব্ধি করা যাচ্ছে কেমন হতে পারে! শিক্ষকরা অবশ্য পর্যাপ্ত জনবলের অভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।’
এ ব্যাপারে অ্যাস্টেট অফিসার এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে এমনটা হচ্ছে। মাত্র ১৩ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিষ্কার করতে হয়। শুধু শৌচাগার নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা-ঘাট ও মাঠও এই গুটিকয়েক ক্লিনারদের পরিষ্কার করতে হয়।’
ক্লিনারদের কিছুটা গাফিলতির বিষয় স্বীকার করে তিনি আরো জানান, ‘ট্যাব না থাকা, ভাঙ্গা শৌচাগার এসব বিষয় প্রকৌশলী দপ্তরের। ভাঙ্গা শৌচাগার পরিষ্কার করলেও কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ভবনগুলোর মতো হলের ওয়াশরুমগুলোর অবস্থাও নাজুক। ফ্লোরে পানি জমে থাকা, দরজা-জানালা ভাঙ্গা, ট্যাপ নষ্টসহ প্রায় সব রকমের সমস্যা হলের ওয়াশরুম গুলোতেও বিদ্যমান।
এ ব্যাপারে ‘অগ্নি-বীণা’ হলের প্রভোস্ট চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দে বলেন, ‘লোকবল খুবই কম, যার তুলনায় এত বাথরুম পরিষ্কারে ক্লিনাররা হিমশিম খাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের তদারকি যদি আরেকটু বৃদ্ধি করা যায় তবে বর্তমানে যা আছে তার থেকে ভবিষ্যতে আরেকটু ভালো পরিবেশ প্রত্যাশা করা যায়।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড