• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভর্তি জালিয়াতিতে রাবি ছাত্রলীগ নেতার ফোনালাপ ফাঁস!

  রাবি প্রতিনিধি

১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:২৭
ফোনালাপ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (ফাইল ছবি)

আগামী সোমবার (২২ অক্টোবর) থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জালিয়াতি চক্রের বিভিন্ন সিন্ডিকেট। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে।

ফাঁস হওয়া ফোন আলাপে শোনা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দূর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক তারেক আহমেদ খান শান্ত একজন ভর্তিচ্ছুকে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নামে টাকার মীমাংসা করছেন। সোমবার (১৫ অক্টোবর) এই কল রেকর্ডিংটি এ প্রতিবেদকের কাছে এসে পৌঁছেছে।

ফোন আলাপটি এমন ছিলো: ‘শান্ত ভাইয়া, আমি এবার সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার রেজাল্টও খারাপ। বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে যে করেই হোক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেই হবে। যতো টাকা লাগে দেবো।’

তখন ফোনের ওপাশ থেকে শান্তর উত্তর শোনা যায়, ‘তুমি কোন ইউনিটে ফরম তুলেছো? আমাদের কিছু সিস্টেম আছে। ঢাকা থেকে এক্সপার্ট এসে তোমার পরীক্ষা দিয়ে যাবে। সায়েন্সে একটু সমস্যা কিন্তু আর্টসে (মানবিক) কাজ করা যাবে। আর এজন্য তিন লাখ টাকা লাগবে।’

রেকর্ডিংয়ের একপর্যায়ে ওই ভর্তিচ্ছুকে বলতে শোনা যায়, ‘গত বছর আমার পরিচিত এক বড় ভাই আপনাদের মাধ্যমে ভর্তি হয়েছিলো। এ বছর যে করেই হোক আমাকে ভর্তি হতেই হবে।’ তখন তিনি (ছাত্রলীগ নেতা) জবাব দেন, ‘ঠিক আছে, মেরিট লিস্টে নাম আসার পর তোমাকে টাকা দিতে হবে। এর আগে পাঁচ হাজারের মতো টাকা দেওয়া লাগতে পারে। এক্সপার্টরা (প্রক্সিদাতা) ঢাকা থেকে আসে তো ওদের জন্য কিছু টাকা লাগে।’

রেকর্ডিংয়ে এক পর্যায়ে দুইপক্ষ আড়াই লাখ টাকার চুক্তিতে সম্মত হয়। ফোন রেকর্ডিং এর বিষয়টি স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা তারেক আহমেদ খান শান্ত। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে একটা ফোনই এসেছিলো। এরপর থেকে ওই ফোন নম্বর বন্ধ। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কেউ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত অধিকাংশরাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্বে আছেন। ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে পরীক্ষার্থী ও প্রক্সিদাতার ছবিতে কারসাজি এবং যেকোনো উপায়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহের পর সমাধান করে তা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর কাছে পাঠানোর মাধ্যমে জালিয়াতির এ ছক আঁকছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের গত কমিটির এক যুগ্ম সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিবছরই রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এসব ভর্তি বাণিজ্য পরিচালনা করেন। সংগঠনের কর্মীরা ভর্তিচ্ছুরা সংগ্রহ করেন। এরপর টাকা মিটিয়ে ভর্তিচ্ছুদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড বা মার্কশিট রেখে দেন তারা। পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটি আবাসিক হলের কক্ষে ভর্তিচ্ছুদের একসঙ্গে বসিয়ে উত্তরপত্রসহ প্রশ্ন সরবরাহ কিংবা প্রক্সির মাধ্যমে জালিয়াতি সম্পন্ন করেন ছাত্রলীগের এই নেতারা।

ভর্তি জালিয়াতির সাথে কোনো ছাত্রলীগ কর্মী জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আসলে আমি এই বিষয়টা জানি না শুনেছি। সত্যটা কতোটুকু জানি না, আসলে ভর্তি জালিয়াতির কোনো সুযোগও নাই। এক্ষেত্রে যদি কেউ তার টাকা ইনকামের (আয়) সোর্স হিসাবে ইউজ (ব্যবহার) করে তাহলে অবশ্যই আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতি রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আমি পুলিশ, ডিজিএফআই, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বলেছি জালিয়াতি রোধে আমাদের সবোর্চ্চ সহযোগিতার জন্য।’

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড