আরিফুল ইসলাম আরিফ
বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। প্রতি বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে অনেক শিক্ষার্থী। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) এখানে চলমান ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিফট পদ্ধতিতে। একাধিক শিফটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। আর এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ার কারণে পরীক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। অনুসন্ধানেও সত্যতা মিলেছে এই অভিযোগের।
একটি ইউনিটের পরীক্ষা একাধিক শিফটে নেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ভর্তিচ্ছুদের অবিভাবকরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
সমালোচকদের অভিযোগ, প্রতিটি শিফটের পরীক্ষায় প্রায় সমান সংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নিলেও কোনো কোনো শিফটে পরীক্ষা দিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পাচ্ছেন আবার কোনো কোনো শিফট থেকে গুটি কয়েক শিক্ষার্থী চান্স পায়। এছাড়া একটি ইউনিটের একাধিক শিফট থাকায় প্রশ্নপত্র সমমানের করা সম্ভব নয়। আর প্রশ্নপত্র ভিন্ন হওয়ায় কারও কাছে তুলনামূলক সহজ আবার কারও কাছে তুলনামূলক কঠিন প্রশ্ন পড়ে। এতে প্রকৃত মেধাবীদের ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলছেন তারা।
নাটোর থেকে পরীক্ষা দিতে আসা হাবিবুল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘একাধিক শিফটে পরীক্ষা নেওয়ায় কখনোই সমমানের প্রশ্নপত্র তৈরি সম্ভব না। দেখা যায়, এক শিফটে যে প্রশ্ন পড়েছে অন্য শিফটে সে প্রশ্ন পড়েনি। পৃথক শিফটে দুজন দুরকম প্রশ্ন পাওয়ায় কেউ বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে, আবার কেউ তুলনামূলক বেশি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ৮টি শিফটে ‘এ’ ইউনিটের (গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ); ৩টি শিফটে ‘এইচ’ ইউনিটের (ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, আইআইটি); ৯টি শিফটে ‘ডি’ ইউনিটের (জীববিজ্ঞান অনুষদ); একটি শিফটে ‘আই’ ইউনিটের (বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট) এবং ৫টি শিফটে বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অপরদিকে ‘সি’ ইউনিটের (কলা ও মানবিকী অনুষদ : নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এবং চারুকলা বিভাগ ব্যতীত) পরীক্ষা ৬টি শিফটে; ‘সি-১’ ইউনিটের (কলা ও মানবিকী অনুষদ : নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এবং চারুকলা বিভাগ) পরীক্ষা একটি শিফটে; ‘এফ’ ইউনিটের (আইন অনুষদ) পরীক্ষা ৪টি শিফটে; ‘জি’ ইউনিটের (ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, আইবিএ-জেইউ) পরীক্ষা দুটি শিফটে এবং ‘ই’ ইউনিটের (বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ) পরীক্ষা ৩টি শিফটে অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ভর্তিচ্ছুদের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় কোনো শিফট থেকে বেশি আবার কোনো শিফট থেকে গুটি কয়েক শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে।
অনুসন্ধানে এ বছরের ‘বি’ ইউনিটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রদের ১৬৩টি আসনের বিপরীতে উত্তীর্ণ ১০ গুণ শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ছাত্রদের শীর্ষ ৫০ জনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই ইউনিটের চতুর্থ শিফট থেকে ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন।
শীর্ষ ৫০ জনের ২৬ জন এসেছেন ৪র্থ শিফট থেকে। বাকি ২৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন অন্য ৪টি শিফট থেকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় শিফট থেকে সবচেয়ে কম দুই জন মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
একইভাবে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রীদের ১৬৩টি আসনের বিপরীতে উত্তীর্ণ ১০ গুণ শিক্ষার্থীর ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ছাত্রীদের শীর্ষ ৫০ জনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই ইউনিটের চতুর্থ শিফট থেকে সর্বোচ্চ ২২ জন ছাত্রী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। বাকি ২৮ জন স্থান পেয়েছে অন্য চারটি শিফট থেকে। ছাত্রদের মতো দ্বিতীয় শিফট থেকে সবচেয়ে কম ৩ জন ছাত্রী শীর্ষ ৫০ জনের মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের (জীববিজ্ঞান অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষায় ৩২০টি (ছাত্র ১৬০, ছাত্রী ১৬০) আসনের বিপরীতে মোট ৩২৩৭ জনের মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্র ১৬২৫ জন ও ছাত্রী ১৬১২ জন। মোট দুই দিনে ৯টি শিফটে ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিনে ৫টি শিফটে ও দ্বিতীয় দিনে ৪টি শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে প্রথম দিনে পরীক্ষা দিয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে ২৫৯৪ জন। অপরদিকে দ্বিতীয় দিনের ৪টি শিফট থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে মাত্র ৬৪৩ জন।
গত বছর ‘এ’ ইউনিটের ছেলে-মেয়ে উভয়ের মেধা তালিকার শীর্ষ ১০০ জনের মধ্যে পঞ্চম শিফট থেকেই প্রায় অর্ধশত করে শিক্ষার্থী চান্স পান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘পরীক্ষা হওয়ার পরে দেখেছি, সব প্রশ্নের স্ট্যান্ডার্ড কিন্তু একই। প্রতি বছর যেভাবে হয় সেভাবে হয়েছে। এমন হতে পারে, কোচিং থেকে সবাই একসাথে ফর্ম তুলেছে। সুতরাং সব ভালো শিক্ষার্থী এক সিরিয়ালে পড়েছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নুরুল আলম বলেন, ‘আমাদের এখানে আবেদন করে বেশি। এতজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা একবারে নেওয়া সম্ভব না। তাছাড়া আমাদের আশেপাশে এত শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত স্কুল-কলেজও নেই। এ কারণে আমাদের শিফট ভিত্তিক পরীক্ষা নিতে হয়।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড