• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভাগনা মাছের জাত উন্নয়ন করলো বাকৃবি গবেষকদল

  বাকৃবি প্রতিনিধি

০৩ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৫০
পোনা
ভাগনা মাছের পোনা উৎপাদন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

লাইন ব্রিডিং কৌশলের মাধ্যমে দেশীয় ভাগনা মাছের পোনা উৎপাদন ও জাত উন্নয়নে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বদ্যিালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। দীর্ঘ তিন বছরের গবেষণায় মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের বায়োলজী এন্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ. কে. শাকুর আহম্মদ এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান এ সফলতা অর্জন করেন।

কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও ন্যাশনাল এগ্রো টেকনোলজি ফেইজ-২ এর আর্থিক সহায়তায় গবেষণাটি সম্পন্ন হয়। বুধবার (০৩ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষদীয় চেম্বারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

লাইন ব্রিডিং এমন একটি পদ্ধতি যেখানে একটি মাছকে তার বংশধরদের সাথে ক্রস করানো হয়। ঐতিহ্যগতভাবে একটি পুরুষ মাছকে অনেকগুলো মহিলা মাছের সাথে প্রজনন ঘটানো হয়। লাইন ব্রিডিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন স্টক এর মধ্য থেকে উচ্চ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাগনা মাছ আবিষ্কার করে পরবর্তী জেনারেশনে বংশধরদের মাঝে তাদের জিনগত অবদান বাড়ানো যায়। যা ভাগনা মাছের জাত উন্নয়নে সহায়ক। পাশাপাশি বিভিন্ন লাইনের মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্রতা রক্ষা করা যায়। ভাগনা মাছের জাত উন্নয়নে লাইন ব্রিডিং একটি অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরূত্বপুর্ণ কৌশল।

ভাগনা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম (Labeo ariza, Hamilton 1807)। ছোট কার্প জাতীয় মাছগুলোর মধ্যে ভাগনা একটি অন্যতম জনপ্রিয় মাছ। এটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড এ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। বাংলাদেশের আত্রাই, যমুনা, কংস, ও ব্রহ্মপুত্র নদীগুলোতে এই মাছটি পাওয়া যায়। ভাগনা মাছটি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন ভাঙন বাটা, ভাগনা, ভাঙন, ভাগনা বাটা ইত্যাদি। মাছটি আকারে ৩০ সেমি এবং ওজনে প্রায় ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। এরা পুকুরের তলার খাদক। কম বয়সে এরা জুওপ্ল্যাংটন এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে সব খাবারই খায়। বর্তমান মাছটির বাজারমূল্য ৫০০টাকা কেজি।

ভাগনা মাছটি উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এতে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট রয়েছে তাই এরা খেতে অনেক সুস্বাদু। অতীতকাল থেকেই ভাগনা মাছটি বাংলার মানুষের কাছে একটি স্বাধের মাছ নামে পরিচিত। বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে ভাগনা মাছের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে অধিক পরিমানে আহরণ, বাসস্থান ধ্বংস এবং ইকোলজিক্যাল পরিবর্তনের কারনে এই মাছটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। গবেষণায় থেকে দেখা গেছে ভাগনা মাছ ৬০দিন চাষের পর মাত্র ৩ গ্রাম ওজন লাভ করে। ভাগনার গ্রোথ প্যাটার্ন খুব ধীর প্রকৃতির। প্রাকৃতিক উৎসের ভাগনা মাছের গ্রোথ বদ্ধ উৎসের মাছের চেয়ে ভালো।

এই গবেষণায় বাংলাদেশের তিনটি নদী আত্রাই (দিনাজপুর), কংস (ময়মনসিংহ) এবং যমুনা (সিরাজগঞ্জ) থেকে প্রাকৃতিক ভাগনা মাছের পোনা জেলেদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তাদেরকে লালন পালন করে গোনাডাল ম্যাচুরেশনকে ত্বরান্বিত করা হয়। এরপর লাইন ব্রিডিং এর মাধ্যমে ভাগনা মাছের উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্ন পোনা উৎপাদন করা হয়। গবেষণায় ৬টি লাইন তৈরি করা হয় এর মধ্যে লাইন ৪ (কংস ও আত্রাই) এর দৈর্ঘ্য ও ওজন সবচেয়ে বেশি পাওযা যায়। বর্তমানে লাইন-৪ থেকেই উন্নতজাতের মা মাছ তৈরি করা হচ্ছে।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ. কে. শাকুর আহম্মদ বলেন, ‘লাইন ব্রিডিং কৌশলের ভাগনা মাছের পোনা উৎপাদন এটি বাংলাদেশে প্রথম। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভাগনা মাছকে সংরক্ষন ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে উচ্চ গুণসমম্পন্ন পোনা উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই মাছটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষৎতে অধিক সংখ্যক পোনা উৎপাদন করে দেশের উন্মুক্ত জলাশয় বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলে ছাড়ার পরিকল্পনা আছে। এছাড়া এই চলমান গবেষণা সম্পন্ন হলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন মৎস্য হ্যাচারীতে এ মাছ পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড