• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুন্সীগঞ্জে আলু চাষাবাদের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ

  আরেফি রিয়াদ

১৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:২৩
আলু চাষ
মুন্সীগঞ্জে আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মুন্সীগঞ্জে প্রান্তিক আলু চাষিরা চলতি মৌসুমে আলু আবাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। নিচু জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই আলু চাষিরা মহা উৎসবের মধ্যে কোমর বেঁধে আলু আবাদে নেমে পড়বেন। ইতোমধ্যেই উঁচু জমি থেকে পানি নেমে গেছে। তবে আলু আবাদের জন্য জমিতে এখানও জো আসেনি।

এক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষিবিদদের ধারণা অক্টোবরের চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই চাষিরা আলু আবাদে নামবে। এই আবাদ আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মুন্সীগঞ্জে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি। কিন্তু সেই অর্থ বছরে আলু আবাদ হয়ে ছিল ৩৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। আর এর আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮শ ৫৮ মেট্রিক টন। কিন্তু সেই অর্থ বছরে আলু উৎপাদন হয়ে ছিল ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৯শ ১২ মেট্রিক টন আলু। সেই অর্থ বছরে বৈরী আবহাওয়ায় কয়েকদিন টানা বৃষ্টির কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আশানুরূপ আলু উৎপাদন হয়নি।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. খোরশেদ আলম দেওয়ান জানান, জাতীয় পর্যায়ে প্রতি ১ হেক্টর জমি আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০ মেট্রিক টন। কিন্তু প্রতি ১ হেক্টরে আলু উৎপাদন হয় ৩০ মেট্রিক টন। এখানকার জমি মূলত আলু উৎপাদন উপযোগি।

তিনি আরও জানান, মুন্সীগঞ্জের বেশিরভাগ আলু জমিই নিঁচু এলাকায়। এলাকার জমিগুলো বর্ষার পানিতে বেশিরভাগ সময়ই ডুবে থাকে। এ কারণে বর্ষার সময় জমিতে প্রচুর পরিমাণে পলি মাটি পরে। যা পরে সেই জমি আলু উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মুন্সীগঞ্জে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার হেক্টর জমি। আর এর বিপরীতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৯শ ১২ মেট্রিক টন।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক মো. হুমায়ূন কবির জানান, মুন্সীগঞ্জে আলু আবাদের সাথে প্রায় ৯০ হাজার চাষি জড়িত রয়েছেন। তাদের প্রাণপণ চেষ্টায় মুন্সীগঞ্জে সব সময়ই আলুর বাম্পার ফলন হয়ে থাকে।

মুন্সীগঞ্জে মোট হিমাগার রয়েছে ৬৮টি। এই হিমাগার গুলোর ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯শ ৭৭ মেট্রিক টন আলু। এইসব হিমাগারে চাষিরা খাবার আলুর পাশাপাশি ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আলু বীজ সংরক্ষণ করে থাকেন। আর সেই আলু বীজ দিয়েই চাষিরা পরবর্তী সময় আলু আবাদ করে থাকেন। প্রকৃত আলু চাষিরা আলু বেশি উৎপাদনের আশায় প্রথমবার হল্যাণ্ডর বাক্স আলু আবাদ করে সেখান থেকেই বীজ সংরক্ষণ করেন। তবে আলু চাষিরা ঐ আলু বীজ ২ বারের বেশি আবাদ করেন না। লোকাল এ পদ্ধতিতে আলু বীজ চাষিদের অনেক উপকারে আসে এবং চাষিদের আলু বীজের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

এখান আর আগের মতো বিদেশি আলু বীজ ও বিএডিসির আলু বীজের জন্য আলু চাষিদের অপেক্ষা করতে হয় না। তাদের নিজেদের কাছেই হিমাগারে মজুদ আলু বীজ দিয়েই চাষিরা প্রতিবছর আলু আবাদে মেতে উঠেন।

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পুরাবাজারে সরকারিভাবে বিএডিসির হিমাগার তৈরি করা হয়েছে গত বছর থেকেই। বিএডিসির হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে ২ হাজার মেট্রিক টন আলু বীজ। তবে চলতি অর্থ বছরে চাষিদের চাহিদা মেটাতে এখান থেকে চাষিদের আলু বীজ দেওয়া হবে।

মুন্সীগঞ্জে আলু বীজের চাহিদা রয়েছে ৭৭ হাজার ৬শ মেট্রিক টন। মুন্সীগঞ্জের আলু বীজ ব্যবসায়ীরা ৫০ কেজির বাক্স হল্যাণ্ড থেকে এ বছর আলু বীজ আনবেন প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন। সেক্ষেত্রে সেই আলু বীজ মুন্সীগঞ্জ লোকাল বাজারের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে বলে এখানকার আলু চাষিরা মনে করেন।

মুন্সীগঞ্জে প্রচুর পরিমাণ আলু উৎপাদন হলেও হিমাগারের ধারণ ক্ষমতার অভাবে আলু চাষিরা গ্রাম্য ৩ পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করে থাকেন। এক হচ্ছে চৈত্র মাসে আলু জমি থেকে তোলার পর জমিতেই আলু নাড়া দিয়ে স্তুপ করে রেখে দেয়। জমিতে পানি না আসা পর্যন্ত প্রায় ২ মাস এ পদ্ধতিতে আলু জমিতেই রেখে চাষিরা বিক্রি করে থাকেন। অনেক চাষি নিজের বসতবাড়ির ভেতর ও আলাদা মাচা ঘর তৈরি করে সেখানে ৬ মাসের মতো আলু রেখে ধীরে ধীরে বিক্রি করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড