অধিকার ডেস্ক ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:০০
মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা দুঃখটা কেউ টের পায় না। দেখে শুধু ট্রাফিক পুলিশের রঙচটা পুরোনো পোশাকের মানুষ আজাহার মণ্ডলকে। মানুষের মাঝে আজাহার খুজে বেড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়ে যাওয়া মা ও আদরের মেয়েকে। তাদের স্মৃতি বুকে ভর করে বেছে নেয় স্বেচ্ছা ট্রাফিক পেশা। উপকার করেন অনেকের, নিয়ম করে বাড়িফেরা পথটুকু করে দেন ট্রাফিক আজাহার মণ্ডল। তার বাঁশির বিকট শব্দ অনেকের কাছেই বিরক্তিকর। কিন্তু কেউ কী জানে কোন এক করুণ বাঁশির সুর বেজে ওঠে তার মনে। এই বাঁশির শব্দেই চাপা পড়ে আজাহার মণ্ডলের কান্নার শব্দ। যে শব্দ সে একাই শুনছে বিশটি বছর।
তপ্ত রোদে ট্রাফিক পোশাক আর মাথায় সেলাই করা ছেঁড়া ক্যাপ, পায়ে ছেঁড়া জুতা। হাতে লাঠির বদলে মোটা তার। নওগাঁর মান্দা উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের চারমাথার মোড়ের ফেরিঘাটে ট্রাফিক কন্ট্রোল করছেন আজাহার আলী মণ্ডল (৫৫)। স্বেচ্ছায় বিনা বেতনে প্রায় ২০ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
মান্দা উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের লক্ষ্মীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা আজাহার আলী মণ্ডল জানান, মহাদেবপুর উপজেলায় প্রবেশমুখে সেতুতে একটি দুর্ঘটনা তার বিবেককে নাড়া দেয়। ওই দুর্ঘটনায় মারা যায় এক মা ও তার মেয়ে। আগে রিকশা চালাতেন বলে আরো অনেক দুর্ঘটনা দেখেছেন। তবে মা-মেয়ের মৃত্যুই তাকে বেশি বিচলিত করে। এরপর থেকেই তিনি স্বেচ্ছায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের এ দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে তিনি মহাদেবপুরে আট বছর এ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১২ বছর ধরে মন্দার ফেরিঘাট চারমাথার মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন।
স্বেচ্ছাসেবী আজাহার জানান, ১৯৯৫ সালে আনছার ভিডিপি থেকে প্রশিক্ষণ নেন। সেখানেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কিছু নিয়ম শেখেন। প্রথম প্রথম তাকে কেউ মানতে চাইত না। তবে পরে যানজট বৃদ্ধি পেলে সবাই তাকে মানতে শুরু করে। প্রতিদিন ফেরিঘাটে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নিরলসভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন আজাহার আলী।
অটোরিকশা-চালক আবু সাইদ বলেন, এ জায়গায় সকাল ও বিকালে বেশি যানজট সৃষ্টি হয়। রাস্তা পারাপারে যে যার মতো যাওয়ার চেষ্টা করেন। আজাহার মিয়া ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করে সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করতে বলেন। আমরা সবাই তার কথা শুনি।
মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম হাবিবুল হাসান বলেন, আজাহার আলী একজন স্বেচ্ছাসেবক ট্রাফিক। সাদা মনের মানুষটি বিনা পারিশ্রমিকে মান্দার ফেরিঘাট মোড়ে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সারা দিন ডিউটি করেন। উপজেলায় যোগদানের পর তিনি আমার কাছে ছোট্ট একটি আবদার নিয়ে আসেন, রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি ছাতা পাওয়া যেত কি না! তার ইচ্ছা পূরণ করেছি।
আজাহার আলী জানান, জীবিকার তাগিদে একসময় তিনি ঢাকায় রিকশা চালাতেন। প্রায় ১৬ বছর রিকশা চালানোর পর নওগাঁয় চলে আসেন। কোন রকমে চলছে অভাবের সংসার। তবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক তাকে কিছু সহযোগিতা করেন। এছাড়া ইউএনও অফিস ও থানা থেকেও তাকে সাহায্য করা হয়। সাহায্য করেন নওগাঁ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) হাফিজুল ইসলামও।
নওগাঁ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) হাফিজুল ইসলাম বলেন, ফেরিঘাট একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম জায়গা। আজাহার আলী স্বেচ্ছায় নিরলস যে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তা অসাধারণ। তার প্রতি প্রশাসনের সুনজর আছে এবং থাকবে।
অর্থ সংকটে চলি। পোশাক কিনতে পারি না। মন্ত্রী স্যার পোশাক কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলেন। সে টাকা দিয়ে চাল-ডাল কিনে খেয়েছি। এছাড়া হার্নিয়ায় ভোগার কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়, বললেন এই আজাহার।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড