অধিকার ডেস্ক ২৩ জুলাই ২০১৮, ১৪:০৫
নড়াইলে পাটের আঁশ ছাড়ানোর মৌসুমি কাজ করছেন প্রায় ২৮ হাজার ৪৫০ জন নারী শ্রমিক। সংসার পরিচালনার পাশাপাশি রোজ ৫-৬ ঘণ্টা কাজ করে ২০০-৩৫০ টাকা আয়ও হচ্ছে তাদের।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পাট উৎপাদনে নড়াইলের অবস্থান অন্যতম। অন্যান্য জেলার তুলনায় পাটের আবাদ বেশ ভালো হয় এখানে। বর্ষাকালে জলমগ্ন থাকায় এ পাট পচাতে সমস্যা হয় না। অসংখ্য খাল-বিল ও জলাশয় রয়েছে এ অঞ্চলে। এরই মধ্যে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। চার মাসের এ মৌসুমি কাজে পুরুষের পাশাপাশি হাত লাগাচ্ছেন নারীরাও।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, প্রতি বছর কয়েক'শ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয় ধোপাখোলা ও কাড়ার বিল এলাকায়। জুলাই এলেই পাকা পথের দু’পাশের উন্মুক্ত জায়গায় শুরু হয় পাট পচানো ও আঁশ ছাড়ানোর কাজ। চলে অক্টোবর পর্যন্ত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করছেন নারীরাও। কথা হয় পাটের আঁশ ছাড়ানোয় কর্মরত সালেহা বেগম নামক এক নারী শ্রমিকের সাথে। তিনি জানান, তার মতো অনেকেই কাজ করছেন সেখানে। পাট ক্ষেত থেকে পাট তোলার পর জলাশয়ে পচানো হয়। কয়েকদিন পর শুরু হয় আঁশ ছাড়ানোর কাজ। এরপর নগদ মজুরি দিয়ে ছাড়ানো আঁশ নিয়ে যায় মালিকপক্ষ। আঁশ ছাড়িয়ে পাটকাঠি নিয়ে বাজারে বিক্রি করেন অনেকে।
সেখানে কথা হয় আরও অনেকের সাথে। মরিয়ম নামে একজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নগদ অর্থ নিয়ে তারা ৩০-৪০টি পাটের ছাড়ানো আঁশ দিয়ে একটি আঁটি বাঁধেন। এ রকম একদিনে ২০টি আঁটি বেঁধে পান ৩৫-৪০ টাকা। একজন নারী শ্রমিক দিনে পাঁচ-সাত কুড়ি আঁটি বাঁধতে পারেন। এখান থেকে পাওয়া টাকায় মরিয়মের সংসার ভালোভাবেই চলছে। স্বামী নুরূলকে নিয়ে ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে তার সংসার। এক ছেলে ও মেয়েকে পাঠাচ্ছেন স্কুলেও।
সদর উপজেলার চর শালিখার রাবেয়া বেগম জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্বামীর সাথে তিনি এ কাজ করছেন। সারাদিন কাজ করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা আয় হয় তার। এই টাকা সংসারের কাজে ব্যয় এবং গ্রাম্য সমিতিতে সঞ্চয় করছেন।
সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ও বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ডহর রামসিদ্ধি গ্রামের প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে চোখ পড়লেই দেখা যায় সারিবদ্ধভাবে ছড়ানো আছে পাটের আঁশ। সেখানেও আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক। এ সময় আমেনা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, পাটকাঠির বিনিময়ে তারা কৃষককে আঁশ দিয়ে দেন। পাটকাঠি জমিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। গত দু’বছরে শুধু পাটকাঠি বিক্রি করেই আয় করেছেন প্রায় ২৮ হাজার টাকা। এই বাড়তি আয়ে তার সংসার আলোর মুখ দেখেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ২০১৮ সালে নড়াইলে প্রায় ১৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এখানে পাট ছাড়ানোর কাজে অংশ নিয়েছেন ২৮ হাজার ৪৫০ জন নারী শ্রমিক। তারা বলছে যদি পাটের উৎপাদন আরও বাড়ানো যায় তবে এ কাজে নারীদেরকে আরও বেশি যুক্ত করা যাবে এবং সংলগ্ন এলাকায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
পচা পাট থেকে যে গন্ধ বের হয় তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি না থাকায় এ কাজে যুক্ত নারীদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড